কোটালীপাড়া প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে সরকারি মাঠ দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ উঠেছে।
তিনি উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লাটেঙ্গা গ্রামের প্রায় ২ শত বিঘার সরকারি মাঠ (গোচারণভূমি) দখল করে মাছ চাষ করেছেন বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে এই মাঠটিতে এলাকার শতাধিক পরিবার শুকনা মৌসুমে গরু চড়ানো এবং বর্ষা মৌসুমে মাঠে উৎপাদিত ঘাস সংগ্রহ করে গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলো। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে এলাকার দরিদ্র মৎস্যজীবিরা এই মুক্ত জলাশয় থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো।
বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস মাঠটি দখল করে মাছ চাষ করায় এখন আর সাধারণ মানুুষ এখানে গরু চড়াতে পারছে না। অপরদিকে বেকার হয়ে পড়েছে মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা প্রায় অর্ধশত দরিদ্র মৎস্যজীবিরা।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস ছিলেন এলাকার দন্ডমুন্ডের কর্তা। এতোদিন তার ভয়ে উপজেলার সাদুল্লাপুর, রামশীল, কলাবাড়ি, রাধাগঞ্জ ইউনিয়নের কোন লোক মুখ খুলতে সাহস পায়নি। যদি কেহ তার বিরুদ্ধে কথা বলতেন তাহলে তার উপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন।
জানাগেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লোক হিসেবে পরিচিত বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস গত মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) অবৈধভাবে ভারতে পালাতে গিয়ে বিএসএফ এর হাতে আটক হয়। বর্তমানে তিনি কলকাতার বসিরহাট আদালতের হাজতখানায় আছেন বিশ্বস্থসূত্রে জানাগেছে।
এদিকে বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস কলকাতায় গ্রেফতারের পরে তার বিষয়ে এলাকার লোকজন মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
লাটেঙ্গা গ্রামের কৃষ্ণ মৃধা ও অরবিন্দু বৈদ্য বলেন, বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস আমাদের এলাকার একমাত্র গোচারণভূমিটি দখল করে মাছ চাষ করেছেন। এই মাঠটির চতুর দিক দিয়ে যে খালগুলো ছিলো তিনি সে খালগুলোও দখল করে নিয়েছেন। যার ফলে আমরা নৌকা নিয়ে যাতায়াত করতে পারছি না। এতে আমাদের চলাচলের ব্যাপক সম্যসাসহ গবাদিপশু পালন দুরুহ হয়ে পড়ছে। আমরা খালগুলো অবমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
স্থানীয় সাংবাদিক জেমস বাড়ৈ বলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস সরকারি মাঠ দখল করে শুধু মাছ চাষ করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। ওই মাঠ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এই অবৈধ বালু উত্তোলনের সংবাদ প্রকাশ করায় বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের লোকজন আমাকে মারপিট করে। এ ঘটনায় আমি কোটালীপাড়া থানায় অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারনে তা আলোর মুখ দেখেনি।
বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস কলকাতার বসিরহাট আদালতে হাজতখানায় থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত লাটেঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য নকুল কুমার বিশ্বাস বলেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাস এলাকার কয়েকজন ব্যক্তিকে নিয়ে একটি কমিটি করে সরকারি এই মাঠটিতে মাছ চাষ করেছেন। এই কমিটিতে আমিও আছি। কমিটির সভাপতি বিমল কৃষ্ণ বিশ্বাসের নির্দেশনায় আমরা দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করে আসছি।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) প্রতীক দত্ত বলেন, সরকারি মাঠ ও খাল কেউ দখল করে মাছ চাষ করলে সেটি দখলমুক্ত করা হবে।