Nabadhara
ঢাকাবৃহস্পতিবার , ৩ জুলাই ২০২৫
  1. অর্থনীতি
  2. আইন-আদালত
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস
  5. কৃষি
  6. খুলনা বিভাগ
  7. খেলাধুলা
  8. চট্টগ্রাম বিভাগ
  9. জাতীয়
  10. জেলার সংবাদ
  11. ঢাকা বিভাগ
  12. তথ্যপ্রযুক্তি
  13. ধর্ম
  14. প্রধান সংবাদ
  15. ফিচার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

যশোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক রাশেদের পদত্যাগ নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা

যশোর প্রতিনিধি
জুলাই ৩, ২০২৫ ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

যশোর প্রতিনিধি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে যশোরে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন রাশেদ খান। কিন্তু রাশেদ খান কেন একবছরের মাথায় পদত্যাগ করলেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। তাহলে কি তিনি নিজেকে গুটিয়ে নিতে চাচ্ছেন, নাকি কোনো অপরাধ ঢাকতেই তার এ সিদ্ধান্ত, এমন প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

 

শুধুই তাই না, সম্প্রতি যশোরে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সাথে রাশেদের আলোচনার বিষয়টিও উঠে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন তিনি বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্ম ছেড়ে গণসংহতি আন্দোলনে যোগ দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু এসব বিষয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছুই জানাননি তিনি। তবে, ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যশোরের এসসিপির নেতৃবৃন্দর উপর।

 

পহেলা জুলাই ভোর ৩টার দিকে তার নিজস্ব ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট দিয়ে পদত্যাগ করেন। তিনি তার পোস্টে লেখেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলার ‘আহ্বায়ক’ পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যহতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইংয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।”

এর কিছুক্ষণ পর নিজের সেই পোস্টে কমেন্টস করেন রাশেদ নিজেই। সেখানে তিনি নানা অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, যশোর জেলার আহ্বায়কের দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। আমি সবসময় আমার শ্রম, মেধা, অর্থ, ধৈর্য ও সময় ব্যয় করে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, কতটা পেরেছি সেটা মূল্যায়ন করার দায়িত্ব আপনাদের। কিন্তু আমি আমার নিজেকে যদি মূল্যায়ন করি, সেক্ষেত্রে বলবো, আরও ভালো কিছু হওয়া উচিত ছিল।”
এদিকে, তার ফেসবুকে এ পোস্ট দেয়ার সাথেই আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একেকজন বিষয়টি একেকভাবে উপস্থাপন করেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেন নিজে বাচতে এ সিদ্ধান্ত আবার কেউ বলেন, সম্প্রতি মণিরামপুরে কমিটি গঠন নিয়ে মোটা অংকের দেনদরবারে ধরা খেয়েই এ সিদ্বান্ত নিয়েছেন তিনি। কেউ বলেন, নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ তার পদত্যাগের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানান। তার এ সিদ্বান্তে সকল দলের রাজনীতিবীদদের মধ্যে দোলা দেয়। কেন মধ্যরাতে এমন সিদ্ধান্ত তার কারণ খুজতে থাকে। অনেকেই আবার তাদের ফেসবুকেও রাশেদকে নিয়ে পোস্ট দেয়।

বুধবার এসব বিষয়ে কথা হয় রাশেদ খানের সাথে। তিনি বলেন, যশোরে বৈষম্যবিরোধী প্লাটফর্ম তার নেতৃত্বে গঠিত হয়েছিলো যা কারও অজানা না। বৈষম্যবিরোধীর রাজনৈতিক সংগঠন এনসিপি গঠন করা হয়। ২৫ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি গঠনে তাদের কাউকেই জানানো হয়নি। এ নিয়েই ক্ষোভের সূত্র পান।
তিনি বলেন, যশোরের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে এনসিপির সাকীব শাহরিয়ার ও খালিদ সাইফুল্লাহ জুয়েলকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অথচ তারা যশোরে এসে নিজেরাই শক্তিশালী হওয়ার কাজ শুরু করেন।

রাশেদ বলেন, এনসিপি যশোরে প্রোগাম করে অথচ তাদেরকে দাওয়াততো দুরের কথা নূন্যতম জানানোও হয়না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের নেতৃত্বদানের সময় তিনি প্রতিটি উপজেলাকে সুসংগঠিত করেছেন। অথচ যশোরে এনসিপি বিভিন্ন উপজেলায় ত্যাগীদের বাদদিয়েই কমিটি গঠনের চেষ্টা করতেন। তাদের কাছে কোনো কনসার্ন নেয়ারও প্রয়োজন মনে করছেন না।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যশোরে এনসিপি সাবেক ছাত্রশিবির নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে চলছে। যারা স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি। আমি তাদের সাথে চলতে পারিনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এছাড়া তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে কথা বলা নিছক। আমার বিষয়ে প্রয়োজনে আপনারাও ক্ষতিয়ে দেখতে পারেন আমার টাকা পয়সা কতটা রয়েছে।

 

মণিরামপুরে কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, তাকে দ্রুত ও একটি পক্ষ নিয়ে মণিরামপুরের কমিটি ঘোষনার জন্য কেন্দ্রীয় এক নারী নেত্রী চাপ দিয়েছিলো। কিন্তু তিনি রাজী হননি। এজন্য কমিটি দেয়া হয়নি। তিনি আরও বলেন, মণিরামপুরে কমিটি গঠনের বিষয়ে যাদের কথা বলা হয়েছে তারা ত্যাগ স্বীকার করেছে ঠিকই কিন্তু যাদেরকে বঞ্চিত করা হচ্ছিল তাদেরও বড় ত্যাগ ছিলো। ফলে তিনি কমিটি গঠন থেকে পিছিয়ে এসেছেন। কিন্তু কোনো অনৈতিক লেনদেন হয়নি।

 

এছাড়া, জোনায়েদ সাকির দলে যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার নিজেস্ব আদর্শ রয়েছে। বামপন্থী রাজনীতিতে আমি বিশ্বাসী। তবে, এই মুহুর্তে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

 

এ বিষয়ে এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক সাকিব শাহরিয়ার বলেন, তিনি যশোরের দায়িত্বভার পেয়েই প্রথমেই রাশেদকে ডেকেছেন। এমনকি কিভাবে সংগঠনকে শক্তিশালী করা যায় সে বিষয়েও তার কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। রাশেদ সাড়া না দিলেও অনেকেই সাড়া দিয়েছেন। আর তাদেরকে নিয়েই এনসিপি এগিয়ে চলছে। এছাড়া শিবিরের সাথে রাজনীতির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা পরিক্ষিত নেতাকর্মী খুঁজছি। সেখানে নতুনের সাথে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়া বিভিন্ন সংগঠনের পুরাতন নেতাকর্মীদের অগ্রাধীকার দেয়া হচ্ছে। এখানে শিবির না বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও আসছেন। এছাড়া, বর্তমান যশোরে বৈষম্যবিরোধীর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, মুলত সংগঠনটির যশোরে মেয়াদ উত্তীর্ন হয়েছে অনেক আগেই। ফলে, এ মুহূর্তে হয়তো বৈষম্যবিরোধীর কমিটি নিয়ে তেমন তোড়ঝোড় নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে যশোর জেলা কমিটি প্রকাশ করা হয়। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল আগামী ছয় মাসের জন্য ওই কমিটি অনুমোদন করেন। ঘোষিত যশোর জেলার কমিটিতে রাশেদ খানকে আহ্বায়ক, জেসিনা মুর্শিদকে (প্রাপ্তি) সদস্যসচিব, আবদুল্লাহ আল মামুনকে মুখ্য সংগঠক ও ফাহিম আল-ফাত্তাহকে মুখপাত্র করা হয়। তারা সবাই যশোর সদরের বাসিন্দা। কমিটিতে ১১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, ১২ জনকে যুগ্ম সদস্যসচিব, ৮ জনকে সংগঠক ও ৭৯ জনকে সদস্য করা হয়। ২৭ নভেম্বর আহ্বায়ক রাশেদসহ কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলনের অভিযোগ তুলে যুগ্ম আহ্বায়ক-১-এর পদ থেকে পদত্যাগ করেন মাসুম বিল্লাহ। পরে ৩০ নভেম্বর একই অভিযোগে পদত্যাগ করেন সদ্য ঘোষিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সজীব হোসেন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি সাংগঠনিক নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সদস্যসচিব জেসিনা মুর্শীদ প্রাপ্তির পদ স্থগিত করা হয়। এছাড়াও অনেকেই রয়েছেন যারা অনিয়মিত হয়ে পরেছেন। ফলে এই মুহুর্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন যে যশোরে মুখ থুবরে পড়েছে। গুঞ্জন উঠেছে, কয়েকদিনের মধ্যে জেলা কমিটির আরও ডজনখানেক নেতাকর্মী পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।
ফেসবুকে কমেন্টে রাশেদ আরও উল্লেখ করেন, বর্তমানে অর্থকষ্টে ভুগছেন সেটিও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি একজন আর্টিস্ট, ব্যক্তিগতভাবে আমি দীর্ঘদিন যাবৎ পেশাগত কোনো কর্মে যুক্ত না থাকায় অর্থকষ্টে আছি। আমার বিরুদ্ধে যে সব অর্থবিষয়ক/ব্যাংক ব্যালেন্সবিষয়ক মুখরোচক গল্প উৎপাদন করা হয়, তা নিতান্তই কল্পনাপ্রসূত এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ আমার বাস্তবতা আমি নিজে ফেস করি। তবু যদি কারো সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তদন্ত করে দেখার অনুরোধ রইল।

 

রাশেদ আরও বলেন, আমি এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত আছি। এতোটুকু বলতে পারি, জুলাই বিক্রি করিনি আমি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিখিত কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ না থাকলেও আমার নিজস্ব রাজনৈতিক মতাদর্শ আছে, সেটা হয়তো অনেকের সঙ্গে মিলবে না।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নবগঠিত কমিটি এনসিপি দ্বারা প্রভাবিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ কেন্দ্রীয় কমিটির কোনো নির্দেশনা না থাকায়, সংগঠন সারাদেশেই স্তিমিত হয়ে গেছে। স্ব স্ব ইউনিট থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকসময় কেন্দ্রীয় নেতাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। একই সঙ্গে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এনসিপি, যুবশক্তি, বাগছাস ইত্যাদি রাজনৈতিক প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি কমন প্লাটফর্ম হলেও এর নবগঠিত কমিটি এনসিপি দ্বারা প্রভাবিত একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছে, যা বিভিন্ন জেলার নেতাদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। তারপরেও তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের প্রতি শুভকামনা থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।