জুলফিকার বাবলু, মাদারগঞ্জ (জামালপুর)
জামালপুরের মাদারগঞ্জে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে একটি ভুয়া এনজিও। এনজিওটির নাম ‘সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা’। মঙ্গলবার (১ জুলাই) বিকালে গ্রাহকদের ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির কেউ আর দেখা দেয়নি। এতে প্রতারিত গ্রাহকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগীরা জানান, “সমাজ কল্যাণ উন্নয়ন সংস্থা” নামধারী এই এনজিও সম্প্রতি মাদারগঞ্জ পৌরসভা ও আশপাশের এলাকায় সদস্য সংগ্রহ শুরু করে। মাত্র ২০০ টাকায় সদস্যপদ দেওয়ার পাশাপাশি ১১ হাজার টাকা জমা দিলে ১ লাখ টাকা এবং ৩৩ হাজার টাকা দিলে ৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তারা। ওই টাকা দুই বছরের মধ্যে সহজ কিস্তিতে পরিশোধ করার কথাও বলা হয়।
পৌরসভার জোনাইল এলাকার শিউলি বেগম জানান, তাকে ৩ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৩৩ হাজার টাকা নিয়েছে এনজিও কর্মীরা। মল্লিকা প্লাজার ছাদে বিকেলে ঋণ বিতরণের কথা থাকলেও সেখানে গিয়ে দেখা যায় অফিস তালাবদ্ধ, কেউ নেই।
একই এলাকার মিনা বেগম বলেন, “তারা ৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা বলে আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুরেছে। আমি ৬০ হাজার টাকা দিয়েছি। বিকালে টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও কিছুই পাইনি।”
এভাবে অনেকেই হাজার হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। শিপা বেগম, ফরিদা খাতুন, চায়না বেগম, তাহমিনা ও ইতি বেগমসহ আরও অনেকেই প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
জানাগেছে, এনজিওটির নামে গ্রাহকদের দেওয়া সঞ্চয় বইয়ে প্রধান কার্যালয় হিসেবে ‘মিরপুর-২, ডি-ব্লক’ উল্লেখ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির সুনির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন ও অনুমোদনের তথ্য কেউ জানে না। বইয়ে ৪৩৯/১৯৯০ নম্বর একটি রেজিস্ট্রেশন উল্লেখ থাকলেও সেটি কোথা থেকে নেওয়া বা বৈধ কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়নি।
দোস্ত মার্কেট ‘মল্লিকা প্লাজার’ মালিক ঈমান আলী জানান, ওই লোকজন সোমবার আকিজ কোম্পানির অফিস নেওয়ার কথা বলে দোকান ভাড়া চান। চুক্তি করতে চাইলেও পরদিন দুপুরে এসে অফিস বন্ধ করে তারা উধাও হয়ে যায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও এনজিও কর্মীদের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ বলেন, “এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা দ্রুত প্রতারকদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।