এম এ ফয়সাল, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বিছট এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর পাউবো নিয়ন্ত্রিত বেড়িবাঁধে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে আনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে নতুন করে দেখা দিয়েছে প্লাবনের আশঙ্কা। আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে বাঁধের ভাঙনপয়েন্ট পরিদর্শনে গিয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, “বিষয়টি জানার পর আমি নিজেই দু’জন সেকশনাল অফিসারকে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেছি। শুক্রবার সকাল থেকে ঠিকাদার ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করেছেন।”
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিছট খেয়াঘাট পর্যন্ত বাঁধের বিভিন্ন অংশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। তবে পাউবো যথাযথভাবে সংস্কার না করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঈদের আগেই এক ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও এখনও পর্যন্ত কার্যকর কাজ শুরু হয়নি।
গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন মোড়ল ও জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সাম্প্রতিক জোয়ারের কারণে বাঁধে নতুন করে ফাটল ধরেছে এবং একটি অংশ ইতোমধ্যেই নদীতে ধসে পড়েছে। যদি দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু না হয়, তবে মার্চ মাসের মতো আরেকটি বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়বে এই এলাকা।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ একই স্থানে বাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমির ৪৫০টি চিংড়িঘের, বোরো ধান, শাকসবজি এবং প্রায় ৬০০টি বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৩ কোটি টাকার ওপরে। ওই ঘটনায় দায় এড়াতে না পারায় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনকে স্ট্যান্ড রিলিজও করা হয়।
বিছট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, “আমরা বারবার পাউবোকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা শুধু আশ্বাস দিয়ে যায়। এখনো বাঁধে জিও ব্যাগ দেখা যায়নি। জোয়ার বাড়লে আর কিছুই করার থাকবে না।”
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, “বিছট ও মনিপুর গ্রামে বাঁধে বড় ধরনের ভাঙন দেখা দিয়েছে। আমি নিজে পাউবো অফিসে গিয়ে বিষয়টি জানিয়েছি। দেরি না করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।”
পাউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা ও ল্যান্ডসাইডে জিও টিউব বসানোর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে। তবে স্থানীয়দের দাবি, দীর্ঘমেয়াদী টেকসই বাঁধ নির্মাণ না করলে প্রতিবছরই এ দুর্ভোগের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
আতঙ্কে দিন পার করা এলাকাবাসী দ্রুত টেকসই বাঁধ সংস্কারের জোর দাবি জানিয়েছেন।