রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধি
সম্প্রতি টানা চারদিনের বৃষ্টিতে যশোর-খুলনা মহাসড়ক এখন যেন এক মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। বৃষ্টি হলে কাদায় পিচ্ছিল, আর রোদে উড়ে ধুলার ঝড়। প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ, শিক্ষার্থী এবং পরিবহন চালকরা। সড়কটি পাকা হলেও দেখে মনে হয় না এটি এক সময়ের ব্যস্ত মহাসড়ক। সড়কের গর্তে জমে থাকা পানি, মাটি বালি মিশে থাকা কর্দমাক্ত অবস্থা এবং যানবাহনের ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা যেন এখন নিত্যদিনের দৃশ্য। উপজেলার প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত সড়কের অবস্থা এতটা ভয়াবহ যে, ভারী যান তো বটেই, হেঁটে চলাচল করাও কষ্টকর। অতিবৃষ্টির কারণে সড়ক এখন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী।
স্থানীয় বাসিন্দা জহির মিয়া জানান, বৃষ্টির পর থেকে সড়কটি কাদা মাটি ভিজে একাকার হয়ে যায়। সড়কের গর্ত জমে গেছে পানিতে। রাস্তায় নিয়মিত ট্রলি, ডাম্পার, ট্রাকের মাধ্যমে মাটি ও বালি বহন করা হয়। এসব অবৈধ যানবাহন থেকে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা মাটি-বালি রোদের সময় ধুলা ও বৃষ্টিতে কাদায় পরিণত হয়। ফলে সড়কটি হয়ে উঠেছে দুর্ঘটনার ফাঁদ। বিশেষ করে মোটর সাইকেল ও হালকা যানবাহনের চালকদের জন্য পথ পাড়ি দেয়া হয়ে উঠেছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। রাস্তা দিয়ে গাড়িতে চলাচল ও হেঁটে পথ পাড়ি দিতে চরম বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।
ট্রাক ড্রাইভার জামাল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিনই অন্তত ২ থেকে ৩ টি ট্রাক সড়কের গর্তে আটকে পড়ে। আজ রাত ৩টায় এসেছি, এখন পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টা পরও এক কিলোমিটার রাস্তা পার হতে পারিনি।
গড়াই পরিবহন চালক হোসেন আলী বলেন, বর্ষা এলেই কাদা, আর শুকনো মৌসুমে ধুলা এই দুই যন্ত্রণায় বছরজুড়েই ভোগান্তি পোহাতে হয়।’
মোটর সাইকেল চালক মেহেদি হাসান বলেন, ‘বৃষ্টির সময় কাদা আর রোদে ধুলায় কিছু দেখা যায় না। কাদায় স্লিপ খেয়ে পড়ে যাই, আবার ধুলায় নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে মাটি ও বালি ব্যবসায়ী এবং ইটভাটা মালিকদের লাইসেন্সবিহীন ট্রলি ও ট্রাক এই মহাসড়ক ব্যবহার করছে। এসব যানবাহন থেকে পড়া মাটি ও বালিই রাস্তার এমন দুরবস্থার জন্য দায়ী।
এ বিষয়ে নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশের টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। দুর্ঘটনা কমাতে মামলা এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সড়কের সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করছে, অচিরেই সড়কের ভোগান্তি দূর হবে বলে আশা করছি।’
যশোর সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ বলেন, ‘কন্ট্রাক্টরকে ডেকে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরুর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারী বর্ষণের কারণে কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। মেরামতের কাজ শুরু হবে এবং দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।’