মতিয়ার রহমান মধু, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় চলমান ভারী বৃষ্টিপাত ও অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো শিক্ষার্থী। পানিবন্দি অবস্থাতেই ক্লাস ও পরীক্ষা দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা।
পাটকেলঘাটার আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস স্কুল, বদ্দিপুর প্রাইমারি স্কুল, ভোমরা রাশিদা স্কুলসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কেউ ভেলা, কেউবা বাঁশ ও পলিথিন ব্যবহার করে কিংবা জুতা হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে। পচা পানি জমে আছে স্কুল মাঠগুলোতে। এতে শিশুরা ঠাণ্ডা-জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
শহরতলির উত্তর কাটিয়া, ইটাগাছা, কুখরালি, ব্রহ্মরাজপুর, ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি, আগরদাঁড়ি, বাঁকাল, মাছখোলা ও তালতলা এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “প্রতি বছর এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, কিন্তু নেই কোনো স্থায়ী সমাধান। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় পুরো কলেজ ক্যাম্পাস এখন পানিতে ডুবে আছে।”
কলেজের শিক্ষার্থী তৈবুর রহমান বলেন, “প্যান্ট গুটিয়ে হাঁটুসমান পচা পানি ঠেলে ক্লাসে যেতে হচ্ছে। মেয়েদের জন্য এটা আরও কষ্টকর, অথচ এখন কলেজে পরীক্ষা চলছে।”
এইচএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, “ভেজা কাপড়েই পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। তিন ঘণ্টা এভাবে বসে থাকা কষ্টকর।”
অভিভাবক দেলোয়ার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি নিজে মেয়েকে নিয়ে কলেজে এসেছি। হাঁটু পানি পার হয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকেছে সে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে কিভাবে পরীক্ষা দেবে?”
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, “শিক্ষার্থীরা কাদা-পানি পেরিয়ে ক্লাসে যাচ্ছে—এটাই কি শিক্ষার পরিবেশ? দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।”
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শোয়াইব আহমাদ জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। দ্রুত উন্নতির আশ্বাসও দেন তিনি।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “জলাবদ্ধতার সমস্যা শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়। স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করে বাঁধ নির্মাণ ও খাল খননের মাধ্যমে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।”
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলায় রয়েছে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১,৩০০টি সরকারি প্রাথমিক, ৫০০টি মাধ্যমিক ও ৬০টিরও বেশি কলেজ রয়েছে। বর্তমানে এর মধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।