হুমায়ন কবির মিরাজ, বেনাপোল প্রতিনিধি
যশোর-১ (শার্শা) আসন ঘিরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ বাড়ছে। এখনো তফসিল ঘোষণা না হলেও এই আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সক্রিয়তা নেই বললেই চলে—ফলে নির্বাচনী লড়াই এখন মূলত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।
বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে অন্তত চারজন নেতা এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির। ছাত্রদল থেকে রাজনীতিতে হাতেখড়ি, এক-এগারোর দুঃসময়ে নেতৃত্বদান এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে দুবার নির্বাচিত হওয়া এই নেতা টানা ১৫ বছর রাজপথে সক্রিয় রয়েছেন। ৪৪টি মামলার আসামি হয়েও দল ও নেতাকর্মীদের পাশে থাকায় তৃণমূলে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি কখনো পিছিয়ে যাইনি। সংকটে নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষকে বিজয়ী করবে।”
অন্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হচ্ছেন যশোর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। তৃপ্তি বলেন, “আমি আগেও মনোনয়ন পেয়েছি, জনগণের জন্য কাজ করেছি। উন্নয়নমূলক নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি চাকরির ক্ষেত্রে মানুষকে সহযোগিতা করেছি। আগামীতেও দল আমাকে মনোনয়ন দিলে শার্শার উন্নয়নে কাজ করবো।”
এছাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূরুজ্জামান লিটন এবং দলের প্রধান উপদেষ্টা খায়রুজ্জামান মধুও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। লিটন বলেন, “দলের আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলাম। মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে আমার। মনোনয়ন পেলে বিজয় নিশ্চিত করবো।”
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিয়ে মাত্র ৫ হাজার ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকায় তার সর্বদলীয় গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
আজিজুর রহমান বলেন, “শার্শাকে দুর্নীতি ও মাদকের কবল থেকে মুক্ত করে একটি আদর্শ উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো।”
বর্তমানে যশোর-১ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ৬৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৬ জন, নারী ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ১১৪ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২ জন।
আসনটির ইতিহাসে আওয়ামী লীগ ৭ বার, বিএনপি ৩ বার এবং জামায়াত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ বার করে বিজয়ী হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবার বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।