নিলকন্ঠ বাকচী, নবধারা বিশেষ প্রতিনিধিঃ
স্বামী কর্তৃক নির্যাতিতা শান্তি বিশ্বাস সুবিচারের আশায় আদালতে ঘুরে ঘুরে সর্বশান্ত হয়েছেন। ৪ বছরেও সুবিচার পাননি তিনি। এখন তার চোঁখে কেবলই হতাশা। করোনা সক্রামনের কারণে লক ডাউনে আদালত বারবার বন্ধ হয়ে আছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার বরইহাটি গ্রামের দ্বিজবর বিশ্বাসের মেয়ে শান্তি বিশ্বাস। ২০১১ সালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে হয় বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার শিবপুর গ্রামের কার্তিক কির্তুনীয়ার পুত্র সুরজিৎ কির্তুনীয়ার সাথে। বেশ ভালো ই কাটছিল তাদের দিনগুলি। হঠাৎ বড় ভাসুর দিলীপ কির্তুনীয়ার ও তার স্ত্রীর প্ররোচনায় শান্তির বাবার বাড়ী হতে টাকা আনার জন্য চাপ বাড়তে থাকে। শুরু হয় সংসারে অশান্তি।এক পর্যায়ে শান্তি বাবার বাড়ি হতে ১ লাক ৮০ হাজার টাকা এনে স্বামীকে দেয় স্বামীর হাতে।তাতে যেন ক্ষতে সামান্য একটু প্রলেপ পড়ে। কিছুদিন ভালো থাকার পর আবারো টাকা আনার চাপ দিলে শান্তি তা দিতে তার পরিবারের অপরাগতার কথা জানালে তার উপর শারীরিক নির্যাতন বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে শান্তি বাবার বাড়ি তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে শান্তি গোপালগঞ্জ আদালতে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে তার স্বামী ও তার ভাই সহ ৪ জন কে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় শান্তির স্বামী আটক হলেও পরে মুক্তি পান।নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা নং ৩৯২/২০১৭
এদিকে আদালত পাড়ায় ৪ বছর ধরে হাজিরা দিতে দিতে আজ সর্বশান্ত হয়েছেন শান্তি। ছোট বোন ও তার স্বামীর আশ্রয়ে থাকা শান্তির হয়ে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করার কেউ নেই। এমনি মামলার তারিখ ও তিনি কখনো কখনো জানতে পারেন না। তবু শান্তি তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে।
শান্তি বিশ্বাসের বৌদি রত্না বিশ্বাস বলেন, শান্তির সাথে যাবার কোন লোক না থাকায় মামলাটি দেখাশোনা করার কেউ নেই। শান্তি লেখাপড়া জানে না সে মামলা মোকাদ্দমা বোঝে না তাই তাকে কে বা কারা ফোন করে শুক্রবার মামলার তারিখের কথা জানিয়েছে। এভাবে কয়েকবার শুক্রবার আদালতে সে গিয়ে দেখে আদালত বন্ধ।
মামলার বাদী শান্তি বিশ্বাস বলেন, চার বছর পরে আদালতে ঘুরতে ঘুরতে আমি অর্থনৈতিকভাবে সর্বস্বান্ত হয়েছে। প্রথমে আমার ভাইবোনেরা আমার সঙ্গে যেত এখন আর কেউ যেতে চায়না। আদালতে তারিখের দিন অনেক খরচ হয় তাও আমি দিতে পারি না। মাননীয় আদালত আমাকে সুবিচার দেবেন এই আমার প্রার্থনা।
গোপালগঞ্জ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যডভোকেট রঞ্জিত বাইন গামা বলেন, মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। করোনার কারনে মামলাটির দীর্ঘসূত্রিতা হয়েছে। লকডাউন শেষ হলে নিয়মিত আদালত বসলে আশা করি শান্তি সুবিচার পাবেন।
এদিকে শান্তি কে আইনি সহায়তা প্রদান করার জন্য তার পাশে দাড়িয়েছে “মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও আম্বেলা ফাউন্ডেশন”।
আম্বেলা ফাউন্ডেশনের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ার প্রকল্প সমন্ময়কারী আতিকুজ্জামান নবধারা কে বলেন, শান্তিকে আমরা আইনি সহায়তা প্রদান করে তার পাশে দাড়িয়েছি।আমরা চাই একটি দৃষ্টন্তমুলক শাস্তি হোক। যা সমাজের কাছে একটি উদাহারন হয়ে থাকবে।