মো. ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
বর্ষাকাল মানেই কৃষিকাজের ভরা মৌসুম। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মাঠে এখন চলছে ধান রোপণের ব্যস্ত সময়। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন মাঠে। তবে ঘাম ঝরিয়ে, কাদা-মাটিতে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করলেও পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারীদের মজুরি এখনও কম—এটাই তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
সকালে মাঠে নেমে কাদা ও হাঁটু পানির মধ্যে তারা চারা রোপণে দিনভর কাজ করছেন। রোদ, বৃষ্টি কিংবা শরীরের ক্লান্তি—কিছুই তাদের দমাতে পারছে না। কিন্তু শ্রমের ন্যায্য মূল্য থেকে তারা বঞ্চিত।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (অতিরিক্ত) জাহিদুল ইসলাম ইলিয়াস জানান, “চলতি রোপা আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৭,৪৪৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হচ্ছে। এই সময় নারী শ্রমিকরা বিঘা প্রতি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেলেও পুরুষরা নিচ্ছেন ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা বেশি সময় ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন।”
নারী শ্রমিকদের ভাষ্য, “আমরা সকাল থেকে বিছন (চারা) উত্তোলন করে, জমিতে দাঁড়িয়ে রোপণ করি বিকাল পর্যন্ত। তারপরও মজুরি কম। সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে কম মজুরিতে কাজ করছি।”
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, নারী শ্রমিকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের ন্যায্য মজুরি ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। তারা বলেন, “নারী শ্রমিকেরা শুধু রোপণ নয়, ধান বোনা, আগাছা পরিষ্কার, সেচ, ক্ষেত পরিচর্যা—সব কাজেই জড়িত। কিন্তু এখনো সরকারিভাবে তাদের অবদানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।”
বিরামপুরের মাঠে যে চিত্র প্রতিদিন ধরা পড়ে, তা গোটা দেশের কৃষিনীতিতে পরিবর্তনের ডাক দেয়। সমাজ যাদের ‘সহযোগী’ বলে, তারা আসলে কৃষির ‘মূল চালিকাশক্তি’। তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য, সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে এই নীরব বিপ্লব কখনোই গর্বের ইতিহাস হয়ে উঠবে না।