নবধারা ডেস্ক
থাইরয়েড গ্রন্থি মানবদেহের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা হরমোন উৎপাদনের মাধ্যমে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখে। তবে, এই গ্রন্থির কার্যকারিতা কমে গেলে বা বেড়ে গেলে (হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম), যা শরীরে নানা জটিলতা দেখা দেয়।
থাইরয়েড গ্রন্থি হলো, মানুষের গলার নিচের দিকে থাকে যা একটি প্রজাপতি আকৃতির অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি, যা থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে।
এই হরমোনগুলো শরীরের বিপাকীয় হার, প্রোটিন সংশ্লেষণ, হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা, হজম, এবং হাড় ও পেশীর স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
থাইরয়েডের হরমোনের পরিমাণ কম বা বেশি হলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
যার কারণে থাইরয়েড হতে পারে।
আর থাইরয়েড হওয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে, আয়োডিনের ঘাটতি বা আধিক্য, অটোইমিউন রোগ (যেমন গ্রেভস ডিজিজ বা হাশিমোটোস থাইরয়েডাইটিস), বিভিন্ন প্রকার ভাইরাসের সংক্রমণ, জন্মগত ত্রুটি, কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়া, এবং গর্ভাবস্থা বা সন্তান-পরবর্তী অবস্থা। থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে হরমোন উৎপাদন কমে গেলে বা বেড়ে গেলে এবং গ্রন্থি ফুলে গেলে এই সমস্যা দেখা দেয়, যা হাইপোথাইরয়ডিজম বা হাইপারথাইরয়ডিজম নামে পরিচিত।
হাইপোথাইরয়ডিজমের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ওজন বৃদ্ধি, ক্লান্তি, ঠান্ডা সহ্য করতে না পারা, ত্বক শুষ্ক ও চুলকানি হওয়া, চুল পড়া, পেশী ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, এবং গলার স্বর ভারী বা পাল্টে যাওয়া। এছাড়াও, মুখ ও পা ফুলে যাওয়া, এবং নাড়ির গতি কমে যাওয়া (ব্রাডিকার্ডিয়া) এর মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজমের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে :
বিরক্তি ও উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, ওজন কমে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘাম, দ্রুত হৃদস্পন্দন ও কম্পন, পেশী দুর্বলতা, এবং মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক বা মাসিকের অনুপস্থিতি। ঘাড় ফুলে যাওয়া বা গলগণ্ড, হাত-পায়ের কাঁপুনি, ত্বক পাতলা হওয়া ও সূক্ষ্ম চুল এবং চোখের লালচে ভাব বা ফোলাও এর লক্ষণ হতে পারে।
থাইরয়েড ধরা পড়লে প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া। ডাক্তার পরীক্ষার মাধ্যমে ঠিক কোন ধরনের থাইরয়েড (হাইপো বা হাইপার) এবং এর কারণ নির্ণয় করবেন, এরপর তিনি উপযুক্ত ঔষধ বা অন্যান্য চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেবেন।
থাইরয়েড হলে আমরা কি কি খাবার খেতে পারি :-
আয়োডিনযুক্ত খাবার যেমন সামুদ্রিক মাছ, ডিম, দুধ খেতে হবে এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি, এবং অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
আমাদের জীবনযাত্রায় কি করতে হবে :
নিয়মিত ব্যায়াম, ওজন নিয়ন্ত্রণ, এবং অল্প অল্প করে বার বার খাওয়া উচিত। এছাড়া, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন এবং মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করতে হবে। আর ঘুম সব থেকে জরুরি।
থাইরয়েড কোনো সাধারণ রোগ নয়, এটি শরীরের সামগ্রিক কার্যকারিতার সাথে জড়িত একটি জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই এর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েডের সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব এবং সুস্থ জীবনযাপন করা যেতে পারে।