ফরিদপুর প্রতিনিধি
দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর জেলা বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতারা অন্তত পাঁচটি ভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করে আসছেন। বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা এই অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ফরিদপুর জেলা বিএনপির পাঁচটি প্রধান গ্রুপের মধ্যে তিন থেকে চারটি গ্রুপই তৃণমূল পর্যায়ের সক্রিয় নেতাদের নিয়ে গঠিত।
সৈয়দ মোদারেস আলী ইসা — বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, সাবেক জেলা ছাত্রদল ও যুবদল সভাপতি। তার বাবা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোসারফ আলী ছিলেন জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। গত ১৫ বছরে অসংখ্য মিথ্যা মামলার শিকার হলেও ইসা রাজনীতির মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি ফরিদপুর-৩ (সদর) আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আফজাল হোসেন খান পলাশ — ৯০’র এরশাদবিরোধী আন্দোলনের রাজপথের নেতা, সাবেক জেলা ছাত্রদল ও যুবদল সভাপতি এবং রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক জিএস। তার পক্ষেও রয়েছে বিপুল জনসমর্থন।
সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল — এরশাদবিরোধী আন্দোলনের আরেক নেতা, রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক এজিএস ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক। বর্তমানে ২২টিরও বেশি মামলার মুখে থেকেও তিনি রাজপথে সক্রিয়।
মাহাবুবুল হাসান পিংকু — কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি। জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত এই নেতা নিজস্ব একটি গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন, যার শক্তিশালী তৃণমূল ভিত্তি রয়েছে।
চৌধুরী নায়াব ইবনে ইউসুফ — প্রয়াত মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও কেন্দ্রীয় মহিলা দলের নেত্রী। পিতার রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে তিনি মাঠে সক্রিয় এবং ফরিদপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।
নায়াব ইউসুফ কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল-এর ওপর অনেকটা নির্ভরশীল বলে জানা গেছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বাবুলের একটি শক্তিশালী গ্রুপ রয়েছে, যা জেলা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। দলের অভ্যন্তরে ধারণা, বাবুলের সঙ্গে থাকলে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা পাওয়া সহজ হয়।
ফরিদপুর সদর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ ও ইসা উভয়েই মনোনয়নপ্রত্যাশী হওয়ায় ঐ আসনে দ্বন্দ্ব তীব্র হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা—ফরিদপুরের ১, ৩ ও ৪ আসন পুনরুদ্ধারে বিএনপির ভেতরের বিভাজন বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ প্রচারণা চালানো জরুরি। বর্তমানে ফরিদপুর-২ আসনটি গ্রুপিংয়ের বাইরে রয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কিবরিয়া স্বপন এ বিষয়ে বলেন,“দলে কিছু মতবিরোধ থাকলেও তা নির্বাচনী ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে না। সবাই ধানের শীষের মানুষ, আমরা সবাই এক মঞ্চে আছি।”
রাজনৈতিক মহলের অভিমত, বিএনপি যদি এখনই অভ্যন্তরীণ বিভাজন নিরসনে উদ্যোগ না নেয়, তবে ফরিদপুরে আসন্ন নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন কঠিন হতে পারে।