রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
ভোরের প্রথম আলো ফোটার আগেই খুলনার রূপসা উপজেলার ঘাটভোগ ইউনিয়নের শিয়ালী মাছ বাজার প্রাণ ফিরে পায়। হাঁকডাক, দরদাম আর বাণিজ্যের উৎফুল্লতায় মুখরিত হয়ে ওঠে এই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম পাইকারি মাছের আড়ত। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সিপাহী হিসেবে শিয়ালী বাজারের গতি প্রতিদিন জমজমাট হয়।
শিয়ালী মাছ বাজারের জমজমাট পরিবেশে দেখা যায় ঘেরে উৎপাদিত রুই, কাতলা, বাইম, সিং, মাগুর, চিংড়ি, কই, ট্যাংরা সহ দেশের নানা দেশীয় মাছের সারি। ক্রেতারা মাছের মান যাচাই-বাছাই করে দরদাম ঠিক করে থাকেন, আর শ্রমিকরা ঝাঁপিয়ে পড়েন মাছ ভর্তি বাক্স পরিবহনের কাজে। সকাল থেকে বিকেল অবধি চলে এই প্রাণবন্ত বেচাকেনা, যার আড়ালে রয়েছে হাজারো মানুষের জীবিকা।
নড়াইল থেকে মাছ কিনতে আসা ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেন জানান, “শিয়ালী বাজার থেকে মিঠা পানির মাছ কেনা হয়, যা ঢাকা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। এখানে মাছের দাম তুলনামূলক কম এবং গুণগত মান ভালো হওয়ায় লাভের সম্ভাবনা বেশি।”
স্থানীয় ক্রেতা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, “শিয়ালী বাজারে দেশের সব ধরনের দেশি মাছ পাওয়া যায় এবং মাছ সবসময়ই টাটকা থাকে, এজন্য দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ এখানে মাছ কিনতে আসে।”
শিয়ালী বাজারের মেসার্স চৌধুরী মৎস্য আড়ৎ এর প্রোপাইটর আমিনুল ইসলাম মিলু চৌধুরী বলেন, “প্রায় দুই দশক আগে শুরু হওয়া এই আড়ত এখন প্রতিদিন এক কোটি টাকারও বেশি মাছ বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘের মালিক ও জেলেরা দেশি মাছ নিয়ে এখানে আসেন। বাজারের ওপর নির্ভর করে হাজারো মানুষের জীবিকা চলে।”
মৎস্যচাষি রহমত আলী জানান, “বাজারে মাছ বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তা কম, খুব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায় এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। তবে মাছের খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো লাভ এখন কম। কখনও কখনও খরচও মিটানো কঠিন হয়।”
শিয়ালী মাছ বাজার আড়তদার কমিটির সভাপতি মুরাদ লস্কর বলেন, “খুলনা অঞ্চলের বড় এই মাছের বাজারে প্রতিদিন কয়েকশ মণ সাদা মাছ ও চিংড়ি বিক্রি হয় এবং লেনদেনের পরিমাণ কোটি টাকার বেশি। বাজারের জনপ্রিয়তা টাটকা মাছ, সহজ পরিবহন এবং সঠিক দরেই।”
দেশের বৃহত্তম চিংড়ি ও সাদা মাছের পাইকারি বাজার হিসেবে শিয়ালী বাজার এখন দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। প্রতিদিন এখানে থেকে শত শত মণ মাছ দেশের নানা প্রান্তে পাঠানো হয়। ভোর থেকে শুরু হয়ে দুপুর নাগাদ তীব্র হয়ে ওঠা বাজারের কোলাহল, দরদাম এবং যানবাহনের গর্জনে ভরে উঠে পুরো এলাকা।
দিন শেষে শেষ বাক্স রওনা দিলে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে পড়ে বাজার, তবে বাতাসে থেকে যায় মাছের গন্ধ আর নতুন দিনের প্রত্যাশা, যখন আবার ভোরের আলোয় জেগে উঠবে কোটি টাকার বেচাকেনার শিয়ালী মাছ বাজার।