ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটা এক সাবেক হিসাবরক্ষকের পুনঃযোগদানে আপত্তি জানানোর পর ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলামকে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বিষয়টি জানাজানি হলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সনজীদা শারমিন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে ওএসডি করা হয়।
জানা গেছে, ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাবেক হিসাবরক্ষক মো. ইমরান মেহেদী হাসান ২০২২ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেপ্তার হন এবং প্রায় দুই মাস কারাবাসের পর জামিনে মুক্ত হন। এরপর তাকে শাস্তিমূলকভাবে মাগুরার শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করে বরখাস্ত করা হয়।
চলতি বছরের ২৯ জুলাই তিনি লবিং ও তদবিরের মাধ্যমে পুনরায় ময়মনসিংহে নিজের পুরোনো কর্মস্থলে পদায়ন আদায় করে নেন। এ নিয়ে সিভিল সার্জন ডা. ছাইফুল ইসলাম আপত্তি জানিয়ে পদায়ন বাতিলের সুপারিশ করলে, কর্তৃপক্ষ তার এই আপত্তিকে নির্দেশ অমান্য হিসেবে গণ্য করে তাকে ওএসডি করে দেয়।
এছাড়াও সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে আউটসোর্সিং টেন্ডার বর্ধিত করতে চাওয়া, ক্লিনিক-হাসপাতাল নবায়ন, ও ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের চেম্বার বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়।
তদন্ত কমিটিতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মাঈনুদ্দিন খানসহ তিনজন রয়েছেন। তবে তিনি জানান, “সিভিল সার্জন ওএসডি হয়েছেন শুনেছি, তবে এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি এখনো পাইনি।”
ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. ফয়সল আহমেদ বলেন, “স্যার ওএসডি হয়েছেন শুনেছি। তবে কেন হয়েছেন, তা জানি না। আউটসোর্সিংয়ের টেন্ডারের মেয়াদ শেষে তিনি তা বর্ধিত করতে চেয়েছিলেন, আমি তখন নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছি।”
সব অভিযোগ অস্বীকার করে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাইফুল ইসলাম বলেন,“আমার বিরুদ্ধে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তোলা হলেও আমার যোগদানের পর এখনো কোনো টেন্ডারই হয়নি। ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চেম্বার বন্ধ করার অভিযোগও সঠিক নয়। আমি শুধু প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি রক্ষায় একজন জেলখাটা সাবেক কর্মচারীর যোগদানে আপত্তি জানিয়েছিলাম — হয়তো সেটাই আমার অপরাধ।”