মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়নের হরিনা গ্রামে পরকীয়ার জেরে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে। রবিবার (২ নভেম্বর) রাত ৭টার দিকে ওই গ্রামের মাধব রায়ের ছেলে রনি রায়ের স্ত্রী শিল্পী মল্লিক (২০)-এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এটি আত্মহত্যা না হত্যাকাণ্ড—তা নিয়ে এলাকায় তীব্র রহস্য তৈরি হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় শিল্পীর স্বামী রনি রায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে যশোর সদর উপজেলার সাড়াপোল-রুপদিয়া গ্রামের অনন্ত মল্লিকের মেয়ে শিল্পীর সঙ্গে হরিনা গ্রামের রনি রায়ের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে তিন বছর বয়সী এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
স্বামী রনি রায়ের মা দীপ্তি রায় জানান, রনি বাড়ির সামনেই একটি চায়ের দোকান পরিচালনা করতেন, যেখানে শিল্পীও তাকে সহায়তা করতেন। এ সুবাদে প্রতিবেশী যুবক ইমন রায়ের সঙ্গে শিল্পীর পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ। শুক্রবার রাতে রনি তাদের আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেললে ইমনকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং স্ত্রী শিল্পীকেও বকাঝকা করেন।
পরদিন সকালে শিল্পী প্রতিবেশী ইমনের বাড়িতে গিয়ে ঘটনাটি নিয়ে নালিশ করেন। এরপর স্বামী রনি ও শাশুড়ি দীপ্তি রায়ের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনার পর থেকে তিনি চুপচাপ থাকলেও রবিবার সন্ধ্যায় নিজের ঘরে গিয়ে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে দাবি করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
তবে শিল্পীর পিতা অনন্ত মল্লিক, মা লিলি মল্লিক ও ভাই মহিত মল্লিক এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “এটি আত্মহত্যা নয়, পরিকল্পিত হত্যা।”
তাদের অভিযোগ, “শাশুড়ি দীপ্তি রায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী গণেশ ডাক্তার নামে এক অবিবাহিত ব্যক্তির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন। এ বিষয়টি শিল্পী প্রতিবাদ করায় শাশুড়ি ও স্বামী মিলে তাকে নির্যাতন করে আসছিল। নির্যাতনের একপর্যায়ে তারা শিল্পীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে।”
তারা আরও বলেন, “শিল্পীর শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, যা প্রমাণ করে এটি আত্মহত্যা নয়।”
এদিকে ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত ইমন রায় ও গণেশ ডাক্তার এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
দূর্বাডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গাজী আলতাপ হোসেন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য দীপক কুমার রায় বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পরকীয়ার জের ধরে শিল্পী আত্মহত্যা করতে পারে। তবে পুলিশি তদন্তেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।”
মনিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবলুর রহমান খান বলেন,“খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি এবং ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে স্বামী রনিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মৃত্যুর কারণ নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা বিরাজ করছে, তদন্ত শেষে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    
                                    