শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
রাজবাড়ী-১ (সদর ও গোয়ালন্দ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রদানকে কেন্দ্র করে দলের একাংশের নেতাকর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামকে এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে।
৬ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোয়ালন্দ মোড়ে বিএনপির আঞ্চলিক কার্যালয়ে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসের প্রস্তুতি সভায় এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতা-কর্মীরা।
রাজবাড়ী সদর ও পৌর এবং গোয়ালন্দ উপজেলা ও পৌর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে।
সভায় রাজবাড়ী-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এ্যাডঃ মোঃ আসলাম মিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়া তার বক্তব্যে বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর অনেক ত্যাগ ও জুলুম- অত্যাচার সহ্য করে রাজবাড়ী জেলা বিএনপিকে সংগঠিত করে রেখেছি। আওয়ামী লীগ ও পুলিশের শত বাঁধার মধ্যেও দলের কেন্দ্র ও আঞ্চলিক নেতাদের নির্দেশনায় ঝুঁকি নিয়ে সকল কর্মকান্ড পরিচালিত করেছি। জেল জুলুমের বিরুদ্ধে আইনী লড়াই লড়েছি। সর্বদা কর্মীদের পাশে থেকেছি।
কিন্তু যিনি ১৭ বছর ঘরের মধ্যে ছিলেন। দল ও দলের কর্মীদের জন্য কোন ঝুঁকিই নেননি। দলের দুঃসময়ে সংস্কারবাদীদের দলে যোগ দিয়েছিলেন তাকেই আবার মনোনয়ন দেয়া হলো।
তারপরও আমরা দলের এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার নির্দেশনা ছিল যিনি মনোনয়ন পাবেন তিনি মনোনয়ন বঞ্চিতদের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে করে নির্বাচনের মাঠে নামবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের এখানে মনোনীত প্রার্থী সেটা করেননি। আমাদেরকে অবজ্ঞা ও হেয় করে চলেছেন। দুঃসময়ে দলের হাল ধরে রাখার এটাই কি আমাদের উপহার!
আমরা ধানের শীষের বাইরের নই। কিন্তু এইভাবে মাঠে নামা সম্ভব নয়। সভায় জেলা বিএনপির আহবায়ক এ্যাডঃ লিয়াকত আলী বাবু,সদস্য সচিব এ্যাডঃ কামরুল হাসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-২ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হারুনর রশীদ হারুন, গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সভাপতি নিজাম উদ্দিন শোখসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
সভাপতিত্ব করেন রাজবাড়ী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন গাজী।
এ দিকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুল হাসান তার বক্তব্যে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে এবং রাগ-অনুরাগ ভুলে নেতাকর্মীদেরকে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করার আহবান জানালে উপস্হিত নেতা কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা অবিলম্বে আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ামের মনোনয়ন বাতিল করে অ্যাডভোকেট আসলাম মিয়াকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানান। এ সময় তারা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও রাজবাড়ী জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পদত্যাগ দাবি করেন। দাবি আদায় না হলে গন পদত্যাগ, রাজপথে কর্মসূচি পালন এবং রাজবাড়ী-১ আসনে বিএনপির সকল ইউনিটের নেতৃবৃন্দের গন স্বাক্ষর নিয়ে কেন্দ্রে জমা দানের ঘোষনা দেন।
বিএনপি নেতাকর্মীদের এ বিক্ষোভের পর রাজবাড়ী-১ আসনে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পক্ষে -বিপক্ষে আলোচনা -সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ দিকে রাজবাড়ী-১ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়াম উদ্ভুত পরিস্হিতিতে তার ফেসবুক আইডি হতে শুক্রবার সকালে একটি লেখা পোষ্ট করেন। সেখানে তিনি দলের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। সেইসাথে তিনি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীকে নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বিজয়ী হলে সকলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আধুনিক ও উন্নত রাজবাড়ী গড়ে তোলার কথা বলেন। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় নিতে এ আসনে জয় লাভের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তবে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি উভয় গ্রুপ আলাদা আলাদা ভাবে পালন করছে।

