মোঃ ইব্রাহীম মিঞা, বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জোতজয়রাম নয়াপাড়া গ্রামের তরুণ মোঃ জোবায়ের হোসেন ওরফে পরান (২২)। পিতা মাসুদ আলীর ছেলে পরান ২০১৯ সালে এসএসসি পাস করেন এবং বর্তমানে বিরামপুর সরকারি কলেজের মানবিক বিভাগে অধ্যয়নরত। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি নিজেই শুরু করেছেন এক সাহসী উদ্যোগ—নদীতীরে হাঁসের খামার গড়ে তুলে হয়েছেন সফল তরুণ উদ্যোক্তা।
২০২৫ সালের ২৪ মার্চ পরান সিদ্ধান্ত নেন কিছু নিজের করার। তিনি নদীর তীরবর্তী এলাকায় পাঁচ শতক জমি ভাড়া নেন এবং ১,২০০টি একদিন বয়সী হাঁসের বাচ্চা এনে খামার শুরু করেন। শুরুতে খামার পরিচালনায় অনেক কষ্ট হয়েছে, কিন্তু তিনি হার মানেননি। কিছু হাঁস বিক্রি করে দিয়ে বর্তমানে সাড়ে চারশো হাঁস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন—এর মধ্যে খাঁকি ক্যাম্বেল ও জিং ডিং জাতের হাঁস রয়েছে।
বর্তমানে তাঁর খামারের প্রায় সাড়ে ৩০০ হাঁস প্রতিদিন ডিম দিচ্ছে। প্রতিদিন হাঁসগুলোর খাবার, ওষুধ ও যত্নে খরচ হয় প্রায় ২,৫০০ টাকা। তবে প্রতিদিনের খরচ বাদ দিয়েও তিনি অতিরিক্ত লাভবান হচ্ছেন। প্রতিটি ডিম পাইকাররা খামার থেকেই ১৩ থেকে ১৪ টাকা দরে কিনে নিয়ে যায়।
পরান জানান, “আমি খামারে সময় দিই প্রতিদিন ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত। খাবার তৈরি থেকে শুরু করে হাঁসের যত্ন, ডিম সংগ্রহ—সব কিছু আমি নিজেই করি। ছোট পরিসরে শুরু করলেও এখন লাভ হচ্ছে ভালো, ভবিষ্যতে আরও বড় করার ইচ্ছা আছে।”
এই খামার শুরু করতে পরান মোট চার লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। তার মধ্যে এক লক্ষ টাকা ব্যাংক ঋণ, আর তিন লক্ষ টাকা আসে নিজের জমির দুই শতক বিক্রি করে। শুরুটা ছিল ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু আজ তাঁর পরিশ্রমের ফলেই ঋণ প্রায় পুরোটা পরিশোধ করেছেন এবং এখন স্থিতিশীল, স্বচ্ছল জীবনের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।
পরানের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে আশেপাশের অনেক তরুণও হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন। এই নদীতীরবর্তী অঞ্চলে এখন গড়ে উঠেছে একাধিক ছোট-বড় হাঁসের খামার। স্থানীয়রা জানান,বেলাল সরকার, ফারুক আহমেদ, সুজন মিয়া ও মশিউর রহমানসহ বেশ কয়েকজন যুবক এখন হাঁসের খামার করে ভালো আয় করছেন। ফলে এলাকায় তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক গতিশীলতা।
বিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বিপুল কুমার চক্রবর্তী বলেন,“শীতকালীন সময়ে হাঁসের ডিমের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। হাঁসের ডিমে উচ্চমানের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকে যা পুষ্টিকর ও আমিষসমৃদ্ধ। বর্তমানে খামারিরা এসব ডিম স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি বিভিন্ন হ্যাচারিতে সরবরাহ করছে। এতে একদিকে স্থানীয় চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের নানা প্রান্তে ডিম রপ্তানি করে খামারিরা লাভবান হচ্ছেন।”
জোবায়ের হোসেন ওরফে পরানের এই সফলতা এখন স্থানীয় তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণার নাম। অনেকে তাঁর খামার দেখতে আসেন, পরামর্শ নেন, কেউ কেউ নতুন খামার শুরু করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। নিজের হাতে গড়া এই উদ্যোগ এখন তাঁর পরিবার, সমাজ ও এলাকার মানুষের কাছে এক গর্বের নাম—“পরানের হাঁসের খামার”।

