মোঃ জিহাদুল ইসলাম, নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার ৬ নং খাশিয়াল ইউনিয়নের চোরখালী গ্রামে প্রায় আড়াই বছর আগে নির্মিত ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে পাকহানাদার বাহিনী কতৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বদ্ধভূমি সংরক্ষন ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সম্বলিত স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানকাল থেকেই অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে আছে। স্মৃতিস্তম্ভের উত্তর ও দক্ষিন পাশের স্টীলের বেষ্টনীর ওপরের সুদৃশ্যমান অংশটুকু কে বা কারা ভেঙ্গে নিয়ে গেছে বলে জানান এলাকাবসী।
এছাড়া ভিতরে আবর্জনার স্তুপ দৃশ্যমান, ওয়াশ রুম, বেসিং, ইলেকট্রিক সুইট-সকেট সবই ভেঙ্গে ফেলেছে উশৃঙ্খল ও মাদকাসক্তরা। কতৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণেই স্মৃতিম্বটি স্মৃতিহীন হয়ে পড়ছে বলে সচেতন মহল মনে করেন। সোলার প্লান্টের মাধ্যমে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থাকলেও অদ্যবধি আলো জ্বলেনি সেখানে। এছাড়া স্মৃতিস্তম্ভের ভিতরে গভীর নলকূপ ও ওয়াশরুমের ছাদে একটি ৫০০ লিটার টেংকি থাকলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন লোক না থাকায় জায়গাটি পরিস্কার করা সম্ভব হয়না বলে জানান অনেকে। এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বেশ কয়েকদিন আগে সোলারের ব্যাটারী ও পানি ওঠানো মটরটি চুরি হয়ে গেছে বাউন্ডারীর ভিতরে মূল স্তম্ভের পিছনে (পশ্চিম) দিকে বেশ কয়েটি টাইলস কে বা কারা তুলে ভেঙ্গে ফেলেছে। মূল গেইটে একটি নামমাত্রা তালা লাগানো থাকলেও বেষ্টনী ভেঙ্গে যাওয়ায় অতি সহজেই মাদকাসক্ত ও ছোট বাচ্চারা খুব সহজেই টপকে ভিতরে গিয়ে আড্ডা মারে বলে জানা যায়। স্মৃতিফলকে জাতীর সুর্য্য সন্তান নড়াইল জেলার মুক্তিযোদ্ধাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখা থাকলেও ৩ নম্বর ক্রমিকে কয়েকটি লাইন মুছে গেছে। স্থাণীয় মুক্তিযোদ্ধারা মনে করেন, এটা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তামাশা করার শামিল। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্মৃতিস্তম্ভটি দ্রুত রক্ষনাবেক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করে রক্ষার আহবান জানিয়েছেন। স্মৃতিস্তম্ভের পাশের বাসিন্দা মৃত সুর্য্য রবির স্ত্রী মালা রানী জানান, নড়াইলের এক কন্ট্রাকটর এ কাজটি করেছিল এবং আমাদের এটা দেখাশুনা করতে বলেছিল। আমি মাঝে মাঝে ঝাড়– দেই। গেইট খোলা থাকায় ছেলে মেয়েরো ভিতরে ঢুকে বিদ্যুতের সুইচ ভেঙ্গে ফেলেছে। পরে আমি আমার বাসা থেকে একটি তালা লাগিয়ে রেখেছি। খাশিয়াল ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খান লুৎফর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কে বা কারা এ স্মৃতিস্তম্ভ করেছে এটা আমাদের জানা নেই। ইউনিয়ন কমান্ডার হিসাবে আমাকে জানানো উচিৎ ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সুর্য্যসন্তান তাদের সরনে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের অবহেলা দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অবমাননার শামিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যপারে যত্বাবান হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
নড়াগাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রোকসানা খাতুন নবধারা কে, সোলার ব্যাটারী ও মটর চুরির ব্যপারে থানায় কোন লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ আসেনি। এ বিষয়ে কালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম বড়দিয়া চোরখালী গ্রামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ আছে। ওখানে কোনরুপ অঘটন ঘটলে চৌকিদারের উচিৎ ছিল প্রশাসনে খবর দেওয়া। তবে মহান এ স্মৃতিস্তম্ভটি রক্ষনাবেক্ষনের ব্যপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।