রিপন হোসেন সাজু, মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
যশোর অঞ্চলে খেজুরগাছের সংখ্যা আগের তুলনায় বাড়লেও বাড়ছে না রস ও গুড়ের উৎপাদন। পেশাদার গাছির অনাগ্রহ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, আধুনিক যন্ত্রের অভাব ও প্রশিক্ষণ সংকটে হুমকির মুখে পড়েছে যশোরের এই সুপ্রাচীন খেজুর রস সংগ্রহের ঐতিহ্য। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অভিজ্ঞ গাছিরা এবং বিপাকে পড়েছেন খেজুরগাছের মালিকরাও।
মনিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের অভিজ্ঞ গাছি আব্দুস সামাদ (৬৫) প্রায় ৫০ বছর ধরে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন। তিনি জানান, একসময় তিনি প্রচুর গাছ কাটতে পারতেন, এখন বয়সের ভারে আগের মতো পারেন না। তার ভাষায়, “গাছ কাটা আমাগো পুরবো-পুরুষির পিশা। খাজুর গাছ এহনও যা আছে তা কোম না, গাছি না পাওয়ায় বস গুড় কমে গেছে।” গত শীত মৌসুমে রস-গুড় বিক্রির পাশাপাশি অন্যদের গাছ রস সংগ্রহের উপযোগী করার কাজ মিলিয়ে তিনি দেড় লাখ টাকার মতো আয় করেছেন। কিন্তু তার ছেলে এই ঝুঁকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য পেশায় আসতে রাজি নন।
গাছিদের মতে, খেজুরগাছে ওঠা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিশ্রমসাধ্য। এলাকার তরুণরা নিরাপদ যন্ত্র বা প্রশিক্ষণের অভাবে এ পেশায় আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে গাছের সংখ্যা বাড়লেও দক্ষ গাছির অভাবে বহু গাছে রস সংগ্রহই হচ্ছে না। গাছ মালিকদের দাবি, নারকেল গাছে ওঠার মতো সহজ যান্ত্রিক প্রযুক্তি খেজুরগাছের জন্য তৈরি করা গেলে উৎপাদন দ্বিগুণ হতে পারে।
মনিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার বীথি বলেন, “খেজুর রস ও গুড় আমাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী সম্পদ। কিন্তু দক্ষ গাছির সংকট এবং নিরাপদে গাছে ওঠার কোনো আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় উৎপাদন কমছে। খেজুরগাছ উপযোগী সহজ যন্ত্র উদ্ভাবন করা গেলে তরুণরা আবার এই পেশায় ফিরবে, উৎপাদনও দ্রুত বাড়বে।” তিনি জানান, বিষয়টি কৃষি গবেষণা সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে এবং গবেষকরা উদ্যোগ নিলে খেজুর শিল্প আবারও সমৃদ্ধ হবে বলে আশা করছেন।
গাছি ও গাছ মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়—
পেশার ঝুঁকি বেশি
আর্থিক নিরাপত্তা নেই
আধুনিক যন্ত্রের অভাব
নিয়মিত প্রশিক্ষণ নেই
তরুণদের আগ্রহ দিন দিন কমছে
তবে তাদের বিশ্বাস, সঠিক পরিকল্পনা, নিরাপদ প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে যশোরের খেজুররস ও গুড় শিল্প নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে।
উল্লেখ্য, যশোরের ভবদহ এলাকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কারণে খেজুরগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।
ঐতিহ্য রক্ষায় গাছি, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদদের যৌথ উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত খেজুর শিল্পকে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে পারে—এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।

