রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
অভ্যুত্থানের পর গত ১৬ মাসে খুলনায় ভয়ংকর বেড়েছে খুনের সংখ্যা—মোট ঘটনাই ৪৮টি। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মাদক বাণিজ্য আর আধিপত্য বিস্তারের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন। শুধু চলতি নভেম্বরেই খুন হয়েছেন সাতজন। একের পর এক হত্যাকাণ্ডে আতঙ্কে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না নগরবাসী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য বলছে—সবচেয়ে নৃশংস ঘটনাটি ঘটে ১৬ নভেম্বর। নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনারের কালভার্ট এলাকায় নানী মহিতুন্নেসা (৫৫), নাতি মুস্তাকিম (৮) ও নাতনি ফাতিহা (৬)-কে নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়। একই রাতেই করিমনগরে নিজ ঘরের ভেতর বুলেট ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারান আলাউদ্দিন মৃধা নামের এক যুবক।
এরপর ২৭ নভেম্বর খালিশপুরে ফেয়ার ক্লিনিকের সামনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন যুবক ইমান। আর সর্বশেষ গতকাল—জনবহুল আদালত চত্বরে আবারও ঘটে দুইটি হত্যাকাণ্ড। শহরের বুকে দিনের আলোয় ধারাবাহিক খুনের প্রবাহ নগরবাসীর উদ্বেগকে আরও ঘনীভূত করছে।
খুলনার রাজনৈতিক ও নাগরিক সংগঠনগুলো হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদ জানাতে নেমেছে মাঠে। মহানগর বিএনপি প্রতিটি ওয়ার্ডে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। আইন অধিকার বাস্তবায়ন ফোরাম গত শনিবার মানববন্ধন করলেও তার পরদিনই ঘটলো আরও দুই নির্মম হত্যাকাণ্ড। ফলে প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে—খুলনা কি আবার আগের সেই দুঃসহ সময়ের দিকে ফিরে যাচ্ছে?
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকে খুলনা ছিল চরমপন্থীদের ঘাঁটি। বোমা হামলা, গুলি আর টার্গেট কিলিং ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষ—কাউকেই ছাড়েনি সন্ত্রাসীরা। পরে যৌথবাহিনীর অপারেশন ‘ক্লিনহাট’ ও ‘স্পাইডার ওয়েব’-এর পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে স্বস্তিতে ফিরেছিল খুলনা। কিন্তু সাম্প্রতিক ধারাবাহিক খুনে সেই শান্তির মুখোশে আবারও দেখা দিচ্ছে ফাটল।
নগরীর নাগরিক নেতারা বলছেন—আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে বিশেষ অভিযান ছাড়া আর বিকল্প নেই। তাদের মতে, অপরাধ দমনে আগের মতোই সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন,
“অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সঙ্গেও যারা যুক্ত—তাদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।”
নগরবাসীর প্রত্যাশা, কথার চেয়ে কাজ দ্রুতই দৃশ্যমান হোক—খুলনা আবার ফিরে পাক নিরাপদ শহরের পরিচয়।

