দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে তুলা চাষে চাষীরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। লাভজনক ও অর্থকরী ফসল হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে তুলার আবাদ। বিশেষ করে হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল জাতের তুলা চাষের ফলে সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় তুলা উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালো ফলন এবং ন্যায্য মূল্যে বিক্রির সুযোগ থাকায় চাষীদের কাছে তুলা এখন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের সার্বিক তত্ত্বাবধান, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা এসব সাফল্যের প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দৌলতপুরে বহুদিন ধরে তামাক চাষ করে আসলেও অনেক চাষী এখন তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উপজেলার প্রাগপুর, আদাবাড়িয়া, মথুরাপুর ও দৌলতপুর ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন দেখা যাচ্ছে সাদা তুলার শোভাবর্ধক ক্ষেত।
চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়া জেলায় মোট ২ হাজার ৪৩৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের তুলা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দৌলতপুরে রুপালী-১, হোয়াইট গোল্ড-১ ও হোয়াইট গোল্ড-২ উচ্চফলনশীল হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ হচ্ছে, যেখান থেকে চাষীরা বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৭ মণ তুলা উৎপাদনের আশা করছেন।
আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ গ্রামের চাষী মোস্তাক আহমেদ বলেন, “এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কয়েকবার বীজ বপন করতে হয়েছে। সার ও কীটনাশকের দাম প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় প্রতি বিঘায় খরচ হচ্ছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।”
অন্য চাষী নাহারুল ইসলাম বলেন, “তুলা দীর্ঘমেয়াদি ফসল, সময় লাগে ৭–৮ মাস। গত বছর প্রতি মণ তুলা ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। এ বছর উৎপাদন খরচ বাড়ায় দাম আরও বাড়ানোর দাবি করছি।”
কুষ্টিয়া তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ আল মামুন জানান, জেলার তিনটি উপজেলা—দৌলতপুর, মিরপুর ও ভেড়ামারায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে ২ হাজার ৪৩৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। কৃষি প্রণোদনার আওতায় ২ হাজার ৫০ জন চাষীকে সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, “জেলায় তুলা চাষীর সংখ্যা সর্বাধিক দৌলতপুরেই। হাইব্রিড উচ্চফলনশীল জাত ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলা চাষ বেড়েছে। চাষীদের প্রশিক্ষণ, উন্নত মানের বীজ ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আমরা উৎপাদন আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”
স্থানীয়দের মতে, তুলা চাষ সম্প্রসারিত হলে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বাড়বে এবং কৃষিতে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।

