রাজশাহী প্রতিনিধি
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গ্রাম আদালত সক্রিয় ও কার্যকরভাবে পরিচালিত হলে উচ্চ আদালতগুলোর ওপর থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মামলা জট কমবে বলে মত দিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেন, গ্রাম আদালতের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে, স্বল্প খরচে এবং সহজ প্রক্রিয়ায় বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। প্রচলিত আদালতে একটি মামলার নিষ্পত্তি পেতে বছরের পর বছর ভোগান্তি পোহাতে হলেও গ্রাম আদালতে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যেই অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘গ্রাম আদালত ব্যবস্থা’ শীর্ষক সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প।
সভায় জানানো হয়, প্রকল্পটির আওতায় রাজশাহীর ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৬ হাজার ১৬৬টি মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে ৫ হাজার ৯৬৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে নারী সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১ হাজার ৬৫১টি। প্রকল্পের অধীনে সাত কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৩ টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে এবং প্রায় ১ হাজার ৫৭ শতক জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, যার আনুমানিক মূল্য পাঁচ কোটি দুই লাখ টাকা। গ্রাম আদালত তিন লাখ টাকা পর্যন্ত মূল্যের দেওয়ানি ও ফৌজদারি বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষমতা রাখে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন,“দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ যাতে কম সময় ও কম খরচে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে, সে ক্ষেত্রে গ্রাম আদালতের বিকল্প নেই। গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, গ্রাম আদালতকে আরও শক্তিশালী করতে অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে বিচারপ্রক্রিয়া মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে, মামলা জট কমবে এবং সরকার যে ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কাজ করছে, তা আরও এগিয়ে যাবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রামের ছোটখাটো অপরাধ বা বিরোধের বেশিরভাগই গ্রাম আদালতের এখতিয়ারভুক্ত হলেও সচেতনতার অভাবে অনেকে থানা বা জেলা আদালতে ছুটে যান। গণমাধ্যম এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে জনগণকে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে।
মতবিনিময় সভায় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও স্থানীয় সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

