আক্তারুজ্জামান বাচ্চু, সাতক্ষীরায় প্রতিনিধি
সাতক্ষীরায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকরা চার দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের অংশ হিসেবে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করায় পরীক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষকরা মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালেও বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ রেখে কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। এতে নির্ধারিত বার্ষিক পরীক্ষা না হওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে না পেরে বিদ্যালয় গেটে হতাশভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। বহু শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়তেও দেখা যায়।
অভিভাবক আবুল কাশেম, আফসার উদ্দিন ও রুহুল আমিন বলেন, সরকারি চাকরিজীবী হয়েও শিক্ষকরা কোনো নোটিশ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে আন্দোলন করছেন। পরপর দুই দিন পরীক্ষা না হওয়ায় শিশুরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছে। এতে তাদের পড়ালেখার ক্ষতি হচ্ছে এবং শিক্ষকদের প্রতি বিরূপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, “গতকাল আইসিটি আর আজ কেমিস্ট্রি পরীক্ষা ছিল। কিন্তু স্যাররা পরীক্ষা না নেওয়ায় বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।”
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি বেতন নেন, কোচিং করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন—এরপরও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ রেখে আন্দোলন করা অমানবিক। এমন শিক্ষকদের সাসপেন্ড করে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া উচিত।”
অন্যদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, চার দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ‘নো ওয়ার্ক’ কর্মসূচি চলবে। কর্মবিরতি কবে প্রত্যাহার হবে—এ ব্যাপারেও তারা নিশ্চিত নন।
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, “শিক্ষকেরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের দাবি যৌক্তিক। তবে শিক্ষা ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির মুখে পড়ছে। আমরা দ্রুত মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ আশা করি।” তিনি জানান, সোমবার ও মঙ্গলবারের পরীক্ষাগুলো স্থগিত করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষকদের তালিকাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবুল খায়ের বলেন, “পরীক্ষা বন্ধ করে কর্মসূচি পালন করায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, মঙ্গলবার থেকে সব বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ছিল, কিন্তু শিক্ষকরা তা অমান্য করেছেন। সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও তালা উপজেলার দুটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
শিক্ষকদের চার দফা দাবি হলো—সহকারী শিক্ষক পদ নবম গ্রেডে উন্নীত করে পৃথক অধিদপ্তরে চারস্তরবিশিষ্ট পদসোপান বাস্তবায়ন।
বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান।
দীর্ঘদিন প্রমোশনবঞ্চিত শিক্ষকদের দ্রুত পদোন্নতি।
অতিরিক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য অ্যাডভান্সড ইনক্রিমেন্ট বহাল রাখা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, এসব বিষয়ে দীর্ঘদিন অবহেলা চলায় তারা ১ ডিসেম্বর থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

