রাসেল আহমেদ,খুলনা প্রতিনিধি
খুলনায় শিক্ষানবিশ ও তরুণ উদ্যোক্তা নির্বাচনে নতুন সুযোগ তৈরি করতে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন আয়োজন করেছে কমিউনিটি আউটলেট সভা।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) সকালে নগরীর জিরোপয়েন্টে অনুষ্ঠিত এ সভায় তরুণদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিকে কেন্দ্র করে উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ দেখা যায়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শওকত হোসেন বলেন, দেশের উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণি পাস তরুণরাও এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিদেশে বাংলাদেশ যে অর্থ উপার্জন করে, শ্রীলঙ্কা দক্ষতার কারণে তার তিনগুণ বেশি আয় করে।”
তিনি জানান, কেউ যদি ছয় মাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়, তাহলে তাকে ২১ হাজার টাকা সহযোগিতা দেওয়া হবে। কাজ শেখার ক্ষেত্রে মনোযোগ, নিষ্ঠা ও আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনারা যে কাজ শিখবেন, সেটি এমনভাবে শিখুন—যাতে ভবিষ্যতে আর কারো অপেক্ষা না করে নিজেই কাজ করতে পারেন।”
সভাপতির বক্তব্যে জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের পরিচালক মোঃ আজিজুল হক বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২১ দশমিক ২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সংকট এ বৃদ্ধির প্রধান কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, আগামী ২০৫০ সালে দেশে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সমতাভিত্তিক রাজস্ব নীতি প্রণয়নের ওপর জোর দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ। বর্তমানে এ বয়সী জনশক্তির সংখ্যা দশ কোটি ৩০ লাখের বেশি। প্রতিবছর প্রায় ২২ লাখ নতুন শ্রমশক্তি যুক্ত হলেও তাদের একটি বড় অংশ নিম্নমজুরি ও অনানুষ্ঠানিক খাতে যুক্ত হচ্ছে, ফলে তাদের প্রকৃত উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে।
তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষতার সঙ্গে উন্নয়নের পথে যুক্ত করা ছাড়া দেশের অগ্রগতি সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন।
স্বাগত বক্তব্যে জোনাল ম্যানেজার নিজাম উদ্দিন জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের চলমান কার্যক্রম তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন উপসহকারী পরিচালক শেখ মোজাম্মেল হক।
বক্তারা জানান, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন দেশের ৫২ জেলায় ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করছে। রেইস প্রকল্পের আওতায় ছয় মাসব্যাপী বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ শেষে যার প্রয়োজন হবে, তাকে ঋণসহ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। তরুণদের কর্মক্ষমতা বাড়াতে এই প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা অভিমত ব্যক্ত করেন।
তরুণদের স্বপ্ন পূরণে দক্ষতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা গড়ে তোলার এমন উদ্যোগ নতুন সম্ভাবনার পথ খুলে দিচ্ছে—এমন প্রত্যাশা থেকেই পুরো অনুষ্ঠানে ছিল আশাবাদের সুর।

