কবির হোসেন, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
একসময় পরিচিত ও জনপ্রিয় দেশীয় সবজি কলার মোচা এখন ধীরে ধীরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় বিলুপ্তির পথে। আধুনিক খাদ্যাভ্যাস, বাজারে চাহিদার ঘাটতি এবং রান্নাকে ঝামেলাপূর্ণ মনে করার কারণে মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খাবারটি আজ অবহেলিত হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কলার মোচায় রয়েছে প্রচুর আঁশ, আয়রন ও ভিটামিন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করতে, হজমশক্তি বাড়াতে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। নিয়মিত খাদ্যতালিকা থেকে এমন উপকারী খাবার বাদ পড়ায় দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্থানীয় কৃষক ইবাদত হোসেন জানান, “আগে কলার মোচার ভালো কদর ছিল। এখন বাজারে নিলে অনেক সময় বিক্রি হয় না। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক মোচা কেটে ফেলে দিতে হয় বা নষ্ট হয়ে যায়।”
উপজেলার ধলাইরচর গ্রামের আরেক কৃষক বাবর আলী বলেন, “কলার ফল বিক্রি হলেও মোচার চাহিদা কম। দাম না পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহও দিন দিন কমে যাচ্ছে।”
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা ডা. জলিল ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. হাকীম মো. বাকাওয়ালী মোল্লা বলেন, “ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাশাস্ত্রে কলার মোচা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ও ঔষধি উপাদান। এটি শরীরের অতিরিক্ত তাপ কমায়, রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে এবং নারীদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় উপকারী। এমন একটি প্রাকৃতিক ও কার্যকর খাদ্য হারিয়ে যাওয়া সত্যিই উদ্বেগজনক।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার সাহা বলেন, “কলার মোচা একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর খাদ্য হলেও সঠিক বাজারজাতকরণ ও প্রচারের অভাবে এটি হারিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।”
স্বাস্থ্যবিদদের মতে, কলার মোচার পুষ্টিগুণ সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি, সহজ রান্না পদ্ধতির প্রচার এবং কার্যকর বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে এই দেশীয় সবজি আবারও মানুষের খাদ্যতালিকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিতে পারে।

