পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ
জীবন বাঁচাতে ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রায় ৯ মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে পিরোজপুরের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার। অন্যায় ভাবে এক যুবককে মারধর করার ঘটনায় সাক্ষী দেওয়ায় স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর। ঘটনার দুই দিন পরই হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয় বসত বাড়ি ও আসবাবপত্র। এরপর বাড়ি ও এলাকা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিলে জীবন বাঁচাতে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেয় এই পরিবার।
ঘটনাটি ঘটেছে জেলার কাউখালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাশেরকাঠি গ্রামে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবার মঙ্গলবার সকালে পিরোজপুর শহরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।
এ সময় লিখিত অভিযোগে সাংবাদিকদের ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দাশেরকাঠি ৩নং ওয়ার্ডে এক ইউপি সদস্যের পক্ষে কাজ করায় মোঃ আজাদ খান নামের এক যুবককে ব্যাপক মারধর করে হাসপাতালে পাঠায়। এঘটনায় মামলা হলে পুলিশ ঐ এলাকায় তদন্তে গেলে ঘটনার সাক্ষী দেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ছোট ছেলে হাফিজুর রহমান হিমেল। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী সুমন খান ও মিরাজ মীরের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী দুই দফায় হামলা চালায় তাদের বাড়িতে। এবং মারধর করে বাসা ও এলাকার ছাড়ার হুমকি দেয়। এঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কাউখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেও সঠিক বিচার না পাওয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চান।
মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা লিখিত অভিযোগপত্রে আরো জানান, ভিটে মাটি ছাড়া হয়েও প্রতিপক্ষের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছি না। অব্যাহতভাবে প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য হামলার ভয়ে আতংকগ্রস্থ হয়ে এখন বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিপক্ষের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থরা আবার কবে বসত ভিটায় ফিরতে পারবেন এই আশায় দিন গুনে চলেছেন।
এসব অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে দাসেরকাঠী গ্রামের বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনেয়ারা বলেন, গত ০৮ জুলাই/২০২১ তারিখ সন্ধ্যার দিকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরাজিত মেম্বর প্রার্থী মিরাজ মীর বিজয়ী মেম্বর জাকির হোসেনের সামর্থক আমার প্রতিবেশী আজাদ খানের উপর হামলা করে। এর ২ দিন পর এ ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকালে আমার পুত্র হাফিজুর রহমান হিমেল বাজার থেকে ফেরার পথে সেখানে উপস্থিত হয়। এ সময় তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে এসে হিমেলকে আজাদের মামলার স্বাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এদিকে প্রতিপক্ষ মিরাজ মীর তার বিরুদ্ধে আজাদের মামলায় হিমেল স্বাক্ষী হওয়ায় ক্ষেপে যায়। ওই দিন সন্ধ্যার দিকে হিমেল তার ছেলে রাফিয়াদ এর জন্য বাড়ীর সামনে কাজলের দোকানে ঔষধ আনতে গেলে প্রতিপক্ষ মিরাজারে নেতৃত্বে রাতুল, রিয়াজ, শাহীন শেখসহ একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তার উপর হামলা চালায়। এর পর হামলাকারীরা হিমেলের বসতবাড়ির মেইন গেইট ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে বসত ঘর, আসবাবপত্র, মটর সাইকেল ভাংচুর করে তান্ডব লীলা চালায় এবং লুটপাট করে।
তিনি আরো বলেন, হামলাকারীরা আমাকে আমার পুত্রবধু সুবর্ণাকে নির্যাতন করে সেটা ঠেকাতে এলে এবং হিমেলকে ফের মারপিট করে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশকে অবগত করা হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং নিরাপত্তা জনিত কারনে হিমেল, তার মা হোসনেয়ারা, স্ত্রী সুবর্ণা ও তার শিশু পুত্রকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেন।
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিমেল বলেন, তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে দীর্ঘদিন প্রায় ৯ মাস ধরে গ্রাম ছাড়া। বাড়ি ঘরে ফিরতে পারছেন না তারা। বিভিন্ন সময়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আসছেন। আমরা বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং নিজ বাড়িতে বসবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।
এসকল ঘটনার মূল অভিযুক্ত সুমন খান মোবাইল ফোনে বলেন, হিমেল একজন মাদকাসক্ত। ও সব সময় নেশা করে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষের সাথে মারামারি করে। ওর বিরুদ্ধে একটা মামলাও হয়েছে, সেখানে জেলও খাটছে। ওর পরিবার যে অভিযোগ করছে তা সব মিথ্যা।
এদিকে এঘটনায় কাউখালী থানায় ওসি বনি আমিন জানান, বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করেছি। আমাদের কাছে নিরাপত্তা চাইলে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পাশে পুলিশ থাকবে।