নবধারা ডেস্কঃ
দুপুরের কাঠ ফাটা রোদের তেজ একটু কমে এলেই শুরু হয়ে যায় তাদের কর্মব্যস্ততা। নিজ হাতে চাল ধুয়ে মাংস বেছে রান্নার জন্য প্রস্তুত করে বড় পাত্র ভরে রান্না করে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার একদল তরণ-তরুণী। রান্না শেষে পরমযত্নে তা প্যাকেট করে নিয়ে রওনা হন গোপালগঞ্জ শহর সহ বিভিন্ন এলাকায়। এরপর হাসিমাখা মুখ নিয়ে খাবারের প্যাকেট গুলো তুলে দিচ্ছেন সারাদিন রোজা রেখে পরিশ্রান্ত, ক্লান্ত মানুষের হাতে। খাবারের প্যাকেট গুলো হাতে পেয়েও তৃপ্তির হাসি দেখা যায় মানুষগুলোর মুখে।
প্রতিদিন এমন করেই রোজাদার সুবিধা বঞ্চিত, গরীব সহ পথচারী, হাসপাতালে থাকা রোগী, রিকশা চালক, ইজিবাইক চালক, এতিম অসহায় মানুষের হাসি মুখের কারণ হচ্ছে গোপালগঞ্জের ‘‘প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ’’ নামের একটি মানবিক সংগঠন।

রাজিব মিয়া নামে স্থানীয় এক যুবকের উদ্যোগ ও হাত ধরে ‘জ্বলে ওঠো মানুষের কল্যানে’ স্লোগান কে সামনে রেখে ২০১৭ সালে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। মাত্র দশজন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী, আইনজীবি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন শ্রেনীপেশার সাড়ে তিনশোর অধিক সদস্য ও স্বেচ্ছ্বাসেবক রয়েছে সংগঠনে।
প্রথম দিকে শুধুমাত্র শীতবস্ত্র বিতরণ দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও পরে দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান, রক্তদান কর্মসূচি, মাসব্যাপী ইফতার সামগ্রী বিতরণ, ঈদ ও দূর্গা পূজায় অসহায় দুস্থ পরিবারের শিশুদের মাঝে নতুন বস্ত্র বিতরণ, বৃক্ষরোপন সহ গোপালগঞ্জ জেলা প্রসাশন কতৃক আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন সংগঠনটির সদস্যরা।
এছাড়াও অতিমারী করোনাকালীন (কোভিড-১৯) সময়েও মাস্ক বিতরণ ও সচেতনতা মুলক কর্মসূচী সহ নানা ধরণের মানবিক কল্যানমুলক কার্যক্রম পরিচালনা করে সংগটনটি।
প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান উদ্যোক্তা রাজিব মিয়া বলেন,
সমাজের সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের জন্য কিছু করা, একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা প্রতিবছরের মতো এবারো ইফতার বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

রাজিব মিয়া জানান, ইফতার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মুলত সংগঠনের সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহীত চাঁদা এবং অনুদানের অর্থ দিয়েই ইফতারের সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি আরোও জানান, চাল,তেল, মসলা, মাংস ইত্যাদি সামগ্রি ক্রয় সহ একেকদিনের ইফতার প্রস্তুতে আনুমানিক আট হাজার টাকা খরচ হয়। দৈনিক ৫০ থেকে ১৫০ জনের ইফতার তৈরী করেন তারা।
প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ এর ইফতার পেয়ে তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে সারাদিন রোজা রেখে পরিশ্রান্ত মুসল্লীদের মুখে। অনেকে আবার ইফতারের প্যাকেট পেয়ে মন ভরে দোয়া করেন সংগঠনের সেচ্ছাসেবীদেরকে। কেউ আবার প্রসংশায় ভাসান তাদের এই মানবিক কার্যক্রম কে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার কুয়াডাঙ্গা গ্রামরর হানিফ মিয়া নামের একজন ভ্যান চালক সংগঠনটির ইফতার পেয়ে বলেন, তাদের এই ইফতার পেয়ে আমি অনেক খুশি। তাদের এমন খাবার দেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাক, তাদের ভালো হোক।

বাগেরহাটের মোল্লাহাট গ্রামের লতিফা বেগম শ্বাশুড়িকে চিকিৎসার জন্যে ভর্তি করেছিলেন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে। রোজা থেকে ইফতারের আগে খাবার নিতে বাইরে এলে তার হাতে খাবারের প্যাকেট তুলে দেয় সংগঠনটির সেচ্ছাসেবীরা। এসময় তিনি বলেন, আমরা এসেছি অনেক দুর থেকে। হাসপাতালে খাবার আনা অনেক কষ্ট। এই খাবার পেয়ে আমি অরেক খুশি হয়েছি।
মোঃ নাজিম নামে আরেক রিকশা চালক বলেন, সারাদিন রোজা রেখে দিন শেষে রকমে ইফতার করি। ভালো খাবারের কথা চিন্তা করা যায় না যে ইনকাম করি। আজকে এরকম ইফতার করতে পারবো ভেবেই অনেক ভালো লাগছে।

সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবক ও সদস্য মোঃ রেজোয়ান আহমেদ চৌধুরি বলেন,
আমি বিগত চার বছর ধরে প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ সংগঠনে কাজ করছি। গত বছরের ন্যায় এবছর ও আমরা ত্রিশ দিন ব্যাপি ইফতার কার্যক্রম চালু রেখেছি। সংগঠনের সদস্যরা নিজ হাতে বাজার করা সহ নিজ হাতে রান্না ও ইফতার বিতরন করে থাকে।
তিনি আরোও বলেন, এই সংগঠনের সদস্যরা পরম যত্নের সাথে নিজ হাতে নিজেরাই নিজ হাতে কাজ করে যাচ্ছে। অসহায় মানুষের সেবায় যাতে আমরা নিজেদের উৎসর্গ করতে পারি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে এটাই আমার নিবেদন।
সংগঠনের আরেক সেচ্ছ্বাসেবী ফাতেমা বলেন, আমরা প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ সংগঠনের সেচ্ছাসেবীরা রোজা রেখে আমাদের আত্মতৃপ্তির জন্য নিজ হাতে অসহায় মানুষদের জন্য ইফতারি নিয়ে আসি এবং বিতরণ করি।

সংগঠনটির কার্যক্রমে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপাড়ার জোবায়ের রহমান রহিম নামে এক যুবক বলেন,
দীর্ঘদিন যাবৎ ধরে আমাদের ইসলাম পাড়ায় দেখেছি একটি সামাজিক উন্নয়ন মুলক কাজ হচ্ছে। পরে খোজ নিয়ে দেখি প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ নামে একটি সংগঠন মানুষের সেবার কাজ করে যাচ্ছে। এরা অসহায় মানুষদের নিয়ে কাজ করে জেনেছি। এছাড়া রক্তদান, বিশেষ বিশেষ দিবস গুলো এবং শীতের সময় বস্ত্র দান সহ মানমসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছে।
তিনি জানান, আমার সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে যেটা তা হলো ইফতার বিতরণ এবং রক্তদান কর্মসূচি। গোপালগঞ্জের সবথেকে বড় যে ব্লাডব্যাংক সেটি এদের হাত ধরেই পরিচালিত হয়েছে।
তাছাড়া রমজান উপলক্ষে ত্রিশ দিন ব্যাপি ইফতার বিতরণ কর্মসূচির প্রসংশা করে তিনি বলেন, এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে আমাদের এলাকার তরুন যুবকেরা এমন একটি মহৎ কাজ করছে। আমি আশাবাদি ভবিষ্যতে তাদের এই কার্যক্রম ও প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা নবধারা কে বলেন,
প্রজ্বলিত গোপালগঞ্জ নামে সংগঠন টি বিভিন্ন সময়ে মানুষের পাশে দাড়িয়েছে, সেবামুলক কাজ করেছে। এবারো তারা মাসব্যাপী ইফতার বিতরণ কর্মসূচি করছে সমাজের মানুষের জন্য৷ আমাদের তরুন প্রজন্ম এগিয়ে আসছে এটি নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয় কাজ।
তিনি জানান, মানবসেবায় যে সকল সংগঠন কাজ করে এবং করবে জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। এসকল মানবিক সংগঠনের সাথে সাথে সমাজের বিত্তবান মানুষের প্রতি এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.