মোঃ জিহাদুল ইসলাম, কালিয়া (নড়াইল) প্রতিনিধিঃ
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কোটাকোল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী মঙ্গলপুর গ্রামের কিছু অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে নদীতে নিশানা পুঁতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী বালু বহনকারী বলগেট মালিক-কর্মচারীরা ও সিলেট গামী বালু বহনকারী মাঝিরা। সরকারি বালুমহল ও সিলেট থেকে বালু বোঝাই করে নদী পথে তারা বিভিন্ন জেলায় সরকারি কাজে বালু সাপ্লাই করে বলে জানান। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনের অভিযানে একটি গ্রুপ নিস্ক্রিয় হলেও বাকী দুই গ্রুপের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বলগেট মাঝিরা। নানা ধরনের ভয়ভীতিসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ।
৩ মার্চ (বুধবার) সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগী মাঝিদের মধ্যে পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানার ডুমি গ্রামের আব্দুল হাইয়ের ছেলে আল-আমীন (২৫), আল-আমীনের ছেলে রমজান আলী (২০), কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিদপুর থানার পাটলী গ্রামের ইব্রাহীমের ছেলে আলী হোসেন (৩৫), মতি মিয়ার ছেলে সাদেক (২৮), নড়াইল জেলার কালিয়া থানার পটেশ্বরী গ্রামের মুনছুর শেখের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৪৮) প্রমুখ জানান, নদীর নাব্যতা হৃাস পাওয়ায় ভাটার সময় বালু বোঝাই বলগেট চরে আটকে যাওয়ায় মঙ্গলপুর গ্রামের একটি গ্রুপ আমাদের সহজে চলাচলের নিমিত্তে নদীতে নিশানা পুঁতে আমাদের কাছ থেকে ১০/২০ টাকা করে নিত। তাতে আমাদের কোন কষ্ট হতো না। কিন্তু পরবর্তীতে ওই গ্রামের পূর্ব পাশে ও মঙ্গলপুর ইব্রাহীম মোল্যার বাড়ীর ঘাটে দুটি স্থানে মঙ্গলপুর গ্রামের দুটি গ্রুপ দিনে ও রাতে ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় আমাদের পথ রোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য করে। ভুক্তভোগীরা আরো জানান, লোকের মাধ্যমে লোহাগড়া থানায় তাদের নির্যাতনের খবর জানানো হলে কোটাকোল ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত এসআই কামরুজ্জামান অভিযান পরিচালনা করে একটি নৌকা ভেঙ্গে দেন। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি তাদের চাঁদাবাজী। ভুক্তভুগী মাঝিরা মনে করেন এই চাঁদাবাজদের পিছনে অনেক প্রভাবশালীদের ইন্দন রয়েছে। ভুক্তভোগী বলগেট মালিক কর্মচারীরা তাদের নিরাপদ চলাচলের আশ্বাস প্রদানে আবারো প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। সরকারী বালু মহলের শেয়ার হোল্ডার ওই গ্রামের মৃত নিছারউদ্দিন মোল্যার ছেলে জিহাদ মোল্যা বলেন, আমাদের বালু মহল থেকে বোঝাইকৃত বলগেট মাঝিরা আমাদেরকে জানায় উক্ত গ্রামের দুটি পয়েন্টে কিছু ছেলেপেলে তাদের কাছ থেকে জোর পূর্বক চাঁদা আদায় করে, না দিলে মারপিট করে। এ ব্যাপারে আমি গ্রামের মুরব্বীদের বলেও তাদের থামাতে পারিনি। কোটাকোল ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোহাগড়া থানার এসআই কামরুজ্জামানকে জানালে উনি এসে একটি নৌকা ভেঙ্গে দেন কিন্তু তাতেও থেমে নেই তাদের অত্যাচর ও চাঁদাবাজী। আমি প্রশাসনের উচ্চ মহলে এ চাঁদাবাজী বন্ধের আহবান জানাই। সচেতন গ্রামবাসীরা জানান, একই গ্রামের দুটি গ্রুপের এভাবে চাঁদা আদায় করায় বলগেট মাঝিরা যেমন নির্যাতনের শিকার, তেমনি যে কোন মুহুর্তে চাঁদা আদায়কে কেন্দ্র করে নিস্ক্রীয় গ্রুপসহ তিন গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, মঙ্গলপুর গ্রামের বারু মোল্যার ছেলে রাজিব মোল্যা (৩২), মৃত ফরিদ মোল্যার ছেলে শিমুল মোল্যা (৩৫), মৃত ছারেজান মোল্যার ছেলে আজগর মোল্যা (৫৫), নাছের শিকদারের ছেলে পারভেজ শিকদার (২৫), মৃত সোনা মোল্যার ছেলে রহিম মোল্যা (২৪), হেমায়েত শেখের ছেলে সৌরভ শেখ (২৫), বালা মোল্যার ছেলে তৈয়ব শেখ (১৮) সহ কয়েকজন নিশানা পুঁতে ছোট্ট ডিংগি নৌকায় বলগেটে এসে দুই থেকে তিন শত টাকা চাঁদা দাবি করে এবং টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে দেশীয় অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল কেড়ে নেওয়াসহ শরীরিক ও মানষিক অত্যাচার করে। ওরা প্রভাবশালী, মাদকাসক্ত ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক হওয়ায় স্থানীয় গ্রামবাসীরাও কোন সমাধান দিতে পারে নাই।
অনুসন্ধানে আরো জনা যায়, উক্ত মঙ্গলপুর গ্রামটির অবস্থান নড়াইল ও গোপালগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী স্থানে হওয়ায় অপরাধীদের অভয়াশ্রম হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়িয়ে মুষ্টিমেয় কিছু লোক মাদক সেবন ও বিক্রি করে যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামবাসীরা জানান। তারা যুব সমাজকে রক্ষায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার নড়াইল প্রবীর কুমার রায় বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। আপনাদের মাধ্যমে চাঁদাবাজীর বিষয়টি জানতে পারলাম। তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।