নবধারা ডেস্কঃ
দীর্ঘ ৪৮ বছর পার হলেও গোপালগঞ্জের চার প্রগতীশীল আন্দোলনের বাতিঘর বীরমুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় উচ্চ আদালতের মাধ্যমে অন্ততঃ ৬ বার স্থগিত করেছে। মামলাটি এখন নিম্ম আদালতে শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।
আজ ১০ মার্চ গোপালগঞ্জের চার কমিউনিষ্ট নেতা মুক্তিযুদ্ধে ৮ ও ৯ নং সেক্টরে কমিউনিষ্ট পার্টি-ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর প্রধান স্বমনয়কারী ওয়ালিউর রহমান লেবু, ন্যাপ নেতা ও জাতীয় সংসদের কোটালীপাড়া আসনের প্রার্থী কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা বিষ্ণুপদ ও মানিকের ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার টুপুরিয়া ব্রীজের কাছে দিবালোকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
দীর্ঘ ৪৮ বছর পার হলেও গোপালগঞ্জের চার মুক্তিযোদ্ধা হত্যা মামলার বিচার কাজ শেষ হয়নি। আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় উচ্চ আদালতের মাধ্যমে অন্ততঃ ৬ বার স্থগিত করেছে। মামলাটি এখন নিম্ম আদালতে শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে।
দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটি (সিপিবি) গোপালগঞ্জ জেলা কমিটি ও পরিবারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।
মামলার বিবরনে জানাগেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হারার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ কোটালীপাড়া আসনে প্রতিদ্বন্দিতা করেন। নির্বাচনের তিনদিন নির্বাচনী কাজ শেষে ১০ মার্চ সকালে কোটালীপাড়া উপজেলার সিকির বাজার থেকে নৌকায় করে গোপালগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হন। নৌকাটি টুপুরিয়া ব্রীজের কাছে পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত মুক্তিযুদ্ধের ৮ ও ৯ নং সেক্টরের কমান্ডার ও কমিউনিস্ট পার্টি-ন্যাপ ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর প্রধান সমন্বয়কারী ওয়ালিউর রহমান লেবু, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ন্যাপ নেতা কমলেশ বেদজ্ঞ, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিষ্ণুপদ ও মানিককে রামদা, কোদাল, লোহার রড, ছ্যান দিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। এদের সাথে থাকা বর্তমান জেলা কৃষকলীগ নেতা লুৎফর রহমান গঞ্জরকে মৃত ভেবে দুর্বিত্তরা ফেলে রেখে যায়। কিন্তু, ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান।
ওই ঘটনার পরদিন ১১ মার্চ তৎকালীন প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ আব্দুল কাদেরের কাছে দেওয়া লুৎফর রহমানের ডায়িং ডিকলারেশন (জবানবন্দি) অনুযায়ী গোপালগঞ্জ থানায় একটি এফ.আই.আর (মামলা) করা হয় (মামলা নং-০৫, তাং-১১-০৩-৭৩, জিআর নং-৯৬/৭৩)। এ মামলায় মুত্তিযুদ্ধের হেমায়েত বাহিনী প্রধান প্রায়ত হেমায়েত উদ্দিন বীর বীক্রমসহ ২১ জনকে আসামী করা হয়। এদের মধ্যে বর্তমানে ৪ জন জীবিত রয়েছেন। মামলার প্রধান আসামী হেমায়েত উদ্দিনসহ ১৭ আসামী মৃত্যু বরন করেছেন।
এদিকে, জীবনের নিরাপত্তায় মামলার বাদী লুৎফর রহমান গঞ্জরের কোন তৎপরতা না থাকায় নিহত কমলেশ বেদজ্ঞর মেয়ে নারী নেত্রী সুতাপা বেদজ্ঞ বাদী হবার জন্য আবেদন করেন। পরে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট আবেদন মঞ্জুর করেন। সেই সাথে মামলার উপর হাইকোর্টের দেয়া স্থাগিতাদেশ খারিজ করায় মামলাটি আবারো গোপালগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারিক কাজ শুর হবে।
নিহত মুক্তিযোদ্ধা কমলেশ বেদজ্ঞের মেয়ে সুতপা বেদজ্ঞ ক্ষোভ আর হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ১৯৭৩ সালের ১০ মার্চ হেমায়েত বাহিনীর প্রধান প্রয়াত হেমায়েতের নেতৃত্বে একদল দূর্বৃত্ত আমার বাবাসহ চার মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করে। দীর্ঘ বছর ধরে আসামী পক্ষ কৌশলে মামলাটির বিচার কাজ বন্ধ রাখে। মহামন্য সপ্রীম কোর্ট স্থাগিতাদেশ খারিজ করায় গোপালগঞ্জ জেলা জজ আদালতে আবারো মামলাটির বিচার কাজ শুরু হবে। আশা করি আমরা বিচার পাবো।
কমিউনিস্ট পার্টি গোপালগঞ্জ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু হোসেন জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৪৮টি বছর অতিবাহিত হলো কিন্তু, মামলার সাক্ষ্য গ্রহন পর্যন্ত হয়নি। এটা চোরাগোপ্তা কোন হত্যা নয় এটা প্রকাশ্য দিবালোকের ঘটনা। এর যথেষ্ট প্রমানও রয়েছে।
মামলার আইনজীবী ও গোপালগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জিপি হাজী এ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার নবধারাকে কে বলেন, মামলার বাদী লুৎফর রহমানের তৎপরতা কম থাকায় নিহত কমলেশ বেদজ্ঞর মেয়ে সুতাপা বেদজ্ঞ বাদী হবার জন্য আবেদন করেন। পরে মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট আবেদন মঞ্জুর করেন। সেই সাথে মামলার উপর হাইকোর্টের দেয়া স্থাগিতাদেশ খারিজ করায় মামলাটি আবারো গোপালগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারিক কাজ শুর হবে।
এই আজীবন বিপ্লবী ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নবধারা পরিবার স্মরণ করছে বিন্ম্র শ্রদ্ধায়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2024 Nabadhara. All rights reserved.