স্টাফ রিপোর্টার,চিতলমারীঃ
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খাসেরহাট বাজার ইজারার দরপত্র জমা দেওয়ায় গৌতম কুমার বিশ্বাস (২৯) নামের এক যুবককে নির্মম ভাবে নির্যাতন করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওহিদুজ্জামান খলিফা ও তার লোকজন। বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে চিতলমারী ইউএনও অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে এই নির্যাতন চালান হয়। পরবর্তীতে আহত গৌতম কুমার বিশ্বাসকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন।
এদিকে গৌতমকে মারধরের পরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়ালের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ওহিদুজ্জামান খলিফা। চিতলমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন প্রতিবাদ করলে তাকেও গালিগালাজ করে । এসময় চেয়ারম্যান নিজামের লোক ও ওহিদুজ্জামানের লোকদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
আহত গৌতম কুমার বিশ্বাস চিতলমারী উপজেলার খাসেরহাট এলাকার বিশ্বদেব বিশ্বাসের ছেলে। সে চরবানিয়ারি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঠিকাদার রনজিত কুমার বাড়ইয়ের পক্ষে খাসেরহাট বাজার ইজারার দরপত্র জমা দিয়ে ছিলেন।
আহত গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, রনজিত কুমার বাড়ই শারীরিকভাবে অসুস্থ্য হওয়ায় আমি তার পক্ষে উপজেলা পরিষদে দরপত্রটি জমা দিতে আসি। যথারীতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে রাখা টেন্ডার বাক্সে দরপত্র ফেলি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওহিদুজ্জামান ও তার লেকজন আমাকে উপজেলা চত্বরে বসে মারধর করে। আমাকে মারধর করতে করতে উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে কোদালের আছাড়ি ও বরফ ভাঙ্গা মুগুর দিয়ে আমাকে আবারও পিটায়। এক পর্যায়ে আমাকে আওয়ামী লীগের অফিসে ফেলে রেখে তারা চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিতলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল বলেন, দরপত্র জমা দেওয়ায় পরিষদের বারান্দা থেকে ধরে নিয়ে গৌতম কুমার বিশ্বাস নামের এক যুবককে বেধরক মারধর করেছে ওহিদুজ্জামান খলিফা ও তার লোকেরা। পরবর্তীতে ওহিদুজ্জামান আমাকে উদ্যেশ্যমূলকভাবে গালিগালাজ শুরু করে। এসময় সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ নিজাম উদ্দিন প্রতিবাদ করলে তাকেও গালিগালাজ করে । উপজেলা পরিষদের ভিতরে এ ধরণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওহিদুজ্জামান খলিফা নবধারা কে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খাসেরহাট বাজারের দরপত্রটি স্থানীয়ভাবে সমঝোতা করে নেওয়ার কথা ছিল। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছিলাম। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের ইন্ধনে গৌতম কুমার বিশ্বাস দরপত্র জমা দিয়ে দেয়। এ কারণে আমি গৌতম বিশ্বাসকে দুটি চড়-থাপ্পড় দিয়েছি, এর বেশিকিছু ঘটেনি।
এদিকে দরপত্র সমঝোতার বিষয়টি মিথ্যা দাবি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পিজুষ কান্তি রায় বলেন, টেন্ডার সমঝোতার বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের যে কথা বলা হয়েছে তা সত্য নয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী টেন্ডার সমঝোতার সাথে জড়িত নয়। আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করতে এসব কথা বলা হচ্ছে। একটি হাট-বাজারের দরপত্র নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক নবধারা কে বলেন, আমরা শুনে ঘটনাস্থলে যাই। পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তবে কেউ থানায় কোন অভিযোগ করেনি।
চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ লিটন আলী নবধারা কে বলেন, আমার কার্যালয়ের মধ্যে তেমন কোন ঘটনা ঘটেনি। উপজেলা চত্বরে একটি মারধরের খবর শুনেছি। কেউ অভিযোগ করলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিব।