নিলকন্ঠ বাকচী, ওড়াকান্দি হতেঃ
করোনা সংক্রমনের কারণে এবার গোপালগঞ্জে বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা প্রশাসন বন্ধ ঘোষণা করলেও সেখানে জড়ো হয়েছেন হাজার হাজার মতুয়া ভক্ত।
কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে শুক্রবার সূর্য ওঠার আগেই স্নানোৎসবে যোগ দিতে দলে দলে এসেছেন মতুয়া সম্প্রদায়ের অনুসারীগন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২৭ মার্চ ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ি ঘুরে যাওয়ার পর থেকে স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার আশায় ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন।
তবে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় বৃহস্পতিবার বিকেলে এই উৎসব বন্ধের ঘোষণা দেন কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্র নাথ রায়।
ঠাকুরবাড়ীর সদস্য ও মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি শচীপতি ঠাকুর নবধারা কে বলেন, ‘করোনাভাইরাস ঠেকাতে এ বছর বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। কিন্তু মতুয়া ভক্তদের আবেগকে অগ্রাহ্য করা যায়নি। তারা বাধা উপেক্ষা করে ঠাকুরবাড়িতে হাজির হয়েছে।’
ঠাকুরবাড়ীর আরেক সদস্য ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর নবধারা কে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী এ বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা বন্ধের ঘোষনা দেয়া হলেও যথারীতি শ্রী শ্রী হরি চাঁদ ঠাকুর ও শ্রী শ্রী গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পূজা-অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘যেহেতু এ বছর বারুণী স্নানোৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে না, সে কারণে ভক্তদের ঠাকুরবাড়িতে আসতে নিষেধ করা হয়েছিল। কিন্তু শত অনুরোধ উপেক্ষা করে লক্ষাধিক ভক্ত এখানে এসেছে, স্নান উৎসব ও পূজা করছে।’
তিনি আরো জানান, ভক্তদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা ও স্নান উৎসব করতে বলা হয়েছে। তবে তা মানা হচ্ছে কি না এ বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, কারও মুখেই নেই মাস্ক, নেই দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা, সবাই উৎসবে মাতোয়ারা। এমনকি সেখানে দেখা যায়নি প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকেও।
মতুয়া হলো হিন্দুদের একটি সম্প্রদায়, যারা উনিশ শতকের ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুর ও তার পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রবর্তিত মতবাদের অনুসারী। হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম ওড়াকান্দির পাশের সাফলিডাঙ্গা গ্রামে। উচ্চবর্ণের হিন্দুদের সঙ্গে বিবাদের জেরে তিনি ওড়াকান্দি এসে বসতি গড়েন। সেই বাড়িই এখন ‘ঠাকুরবাড়ি’ হিসেবে পরিচিত, যা উপমহাদেশে ছড়িয়ে থাকা লাখ লাখ মতুয়ার কাছে এক পুণ্যভূমি।
নমসুদ্র সম্প্রদায়ের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর ও তার ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর।
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষেই এই ঠাকুরবাড়িতে আয়োজন হয় স্নানোৎসবের।
তাতে অংশ নিতে দেশের পাশাপাশি ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মতুয়ারা ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়িতে আসেন। তাদের হাতে থাকে বিজয় ও সত্যের লাল নিশান। ডঙ্কা (বড় ঢোল) বাজিয়ে উলুধ্বনি দিতে দিতে মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দেন তারা।
তাদের বিশ্বাস, এখানকার পুকুরে স্নান করার মধ্য দিয়ে তাদের বিগত দিনের পাপ মোচন হবে। এখানে পূজা করে তারা ভালো ভবিষ্যৎ ও পরিবারের সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করেন।
গত বছরও এ সময়ে করোনার প্রথম ধাপের সংক্রমণ ঠেকাতে এই উৎসব বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তারপরও সেখানে লক্ষাধিক ভক্ত জড়ো হন।