গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে(বশেমুরবিপ্রবি) লেকের পানিতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে সাধারন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন নেমেছে। এতে বর্তমান মেডিকেল অফিসের সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ডাক্তারদের উপর দায় চাপিয়ে এবং তাদের বহিস্কার সহ আরো ৬দফা দাবিতে মুখরিত বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস।
বিকেলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে উপাচার্য সাধারন শিক্ষার্থীদের দাবিপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। বুধবার(২আগস্ট) সারাদিন ব্যাপি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় উপাচার্য দপ্তরের প্রধান ফটকের সামনে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী সহ অন্যান্য বিভাগের প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষার্থী এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। দাবি না মানা পর্যন্ত তাদের এ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানা গেছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবিত ৭ দাবি সমূহ: ১. মেডিকেল অফিসের সমস্ত কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং ডাক্তারকে আগামীকালের মধ্যে বহিষ্কার করতে হবে। ২. নতুন অভিজ্ঞ ডাক্তার এবং নার্স নিয়োগ, এবং তাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩. আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সিসিইউ অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবস্থা করতে হবে। ৪. এক্সপার্ট ড্রাইভার সহ অ্যাম্বুলেন্স এবং একক ফোন নম্বর থাকতে হবে। ৫. ঔষুধ, মেডিকেল সামগ্রী এবং মেডিকেল সেন্টার ১০ শয্যায় উন্নতিকরণ করতে হবে। ৬. রিতু এবং হিয়ার স্মৃতিস্তদ্ধ তৈরি করতে হবে। ৭. পা লেপাড় সংস্করণ (রেলিং, তলদেশ ভরাট, সিঁড়ি, সাইনবোর্ড) -নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবল নেই। এ কারণে হিয়া এবং রিতুকে সময় মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, লেকের পাড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এ কারণে তারা লেকের পানিতে পড়ে ডুবে মারা যান। আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ই এস ডি বিভাগ মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আহসান ইমন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ চিকিৎসা কেন্দ্র। কিন্তু বশেমুরবিপ্রবির চিকিৎসা কেন্দ্র তার বিপরীত৷ এখানে ডাক্তার থাকলে ঔষধ থাকেনা আবার ঔষধ থাকলে ডাক্তার থাকেনা। বিশেষ করে ডাক্তারদের অবহেলা ও প্রশাসনের বিপরীতমুখী চিন্তা-ভাবনার ফলে আমাদের চিকিৎসা কেন্দ্রটির নাজেহাল অবস্থা হয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্খান কর্মসূচি অব্যাহত রাখব। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের খবর পেয়ে আন্দোলন মঞ্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও উপাচার্য এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তারা শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য বলেন,”তোমাদের সকল দাবি মেনে নেওয়া হল এবং অতি দ্রুত এগুলো কার্যকর করা হবে ।” তার পর নিজ কার্যালয়ে থেকে উক্ত বিভাগের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকারনামা দেন । অঙ্গীকারনামা বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময় : ১.অদ্য ০২/০৮/২০২৩ তারিখ মেডিকেল কমিটি পুনগঠন করা হবে এবং আগামীকাল উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ২.আগামী কালের মধ্যে ০২ জন অভিজ্ঞ নার্স আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৩.এম্বুলেন্স ড্রাইভারকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং একক ফোন নাম্বারের ব্যবস্থা ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। ৪.আগামীকাল থেকে এম্বুলেন্স ক্রয়ে প্রক্রিয়া শুরু করা হবে এবং আগামী ০২ মাসের মধ্যে ব্যবস্থা করা হবে। ৫.অগামী ১০ তারিখের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ৬.আগামীকাল থেকে স্মৃতিস্তম্ভের কাজ শুরু করা হবে। ৭.আগামীকাল থেকে লেকপাড় সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসন তাদের দাবিগুলো সময়ের মধ্যে কার্যকর না করলে আবার ও আন্দোলন করবে । এছাড়া, শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সকাল থেকে সারাদিনব্যাপি মৌন মিছিল করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার স্কাউট ইউনিট।
উল্লেখ, গতকাল (১ আগস্ট) লেকের পানিতে ডুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দুই শিক্ষার্থী মোবাশ্বেরা তানজুম হিয়া এবং তাসপিয়া জাহান রিতুর মৃত্যুবরণ করেন। তারা দুজনেই দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আহাদুল ইসলাম জয়