২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ১৮ পেরিয়ে ১৯তে পদার্পণ করলো ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠটি। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরেও নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।
বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক।
এরপর শুরু হয় আনন্দ র্যালি। ক্যাম্পাসের শান্ত চত্বর থেকে শুরু করে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার ও বাহাদুর শাহ পার্ক ঘুরে পুনরায় শান্ত চত্বরে এসে সমাপ্ত হয় এ আনন্দ র্যালি ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার, প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাগণ এ র্যালিতে অংশগ্রহণ করেন।
এদিন আনন্দ র্যালি শেষে বার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। তাছাড়া জবির কেন্দ্রীয় অডিটেরিয়ামে প্রদর্শন করা হয়েছে নকশিকাঁথার মাঠ নাটক। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতে শুরু হয় সাংস্কৃতিক গানের আসর। দুপুর ২ টা থেকে ৪টা পর্যন্ত চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকাল ৪টা থেকে শুরু হয় বিভিন্ন ব্যান্ড দলের গান। এদিন শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল জবি ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের আশা এ মুখরতা নিয়েই এগিয়ে যাবে জবি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৫৫ বছর বয়স্ক এই বিদ্যাপীঠটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে মাত্র ১৮ বছর পূর্ণ করে ১৯ তে পা দিলো। ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ৮ম জাতীয় সংসদের ১৮ তম অধিবেশনে “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫” সংসদে উত্থাপিত হয় এবং ওই বছরের ২০ অক্টোবর সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজকে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।এ বছর ২০ তারিখ শুক্রবার হওয়ার কারণে ১৯ তারিখ সকল ধরনের আয়োজন করা হয়েছে।
১৮৫৮ সালে ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। পরবর্তীতে ১৮৭২ সালে বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরী এ প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে তার বাবার নামে জগন্নাথ স্কুল নামকরণ করেন। সময়ের পরিক্রমায় ১৮৮৪ সালে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের স্নাতক কার্যক্রম ও সেইসাথে আইএ, আইএসসি, মাস্টার্স বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ প্রতিষ্ঠানটিকে ইন্টারমিডিয়েট কলেজে অবনমিত করা হয়।
সময়ের ক্রমধারায় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ ও বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছে নানা মহৎ ও আলোচিত ব্যক্তিবর্গ। যারা বিভিন্ন সময়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছে এবং সামনে এগিয়ে নিয়েছে। এ সকল মহৎ ব্যক্তিবর্গের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ, ভাষা শহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ, শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান, ব্রিটিশবিরোধী নৌ বিদ্রোহের শহীদ মানকুমার বসু ঠাকুর, সাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, লেখক ও সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেতা প্রবীর মিত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বুদ্ধিজীবী, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, কবি ও সাংবাদিক হাসান হাফিজুর রহমান, ঔপন্যাসিক আলাউদ্দিন আল আজাদ, কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসসহ আরও অনেকে।
বর্তমান সময়ের শিক্ষার্থীরাও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বিসিএস, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরি, বিভিন্ন প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ও বিদেশী সংস্থায় চাকরি করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দিন দিন গবেষণা খাতেও এগিয়ে যাচ্ছে তারা, অর্জন করছে নানা পুরস্কার।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বয়স প্রায় দেড় যুগ হলেও এখনো পর্যন্ত তেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি। সম্প্রতি সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ২০০ একর ভূমি দিয়েছে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সম্পূর্ণ জমি অধিগ্রহণ হয়নি। ছাত্রদের হল না থাকায় বিপাকে আছে শিক্ষার্থীরা। যদিও সম্প্রতি ১৬ তলা একটি ছাত্রী হল হয়েছে। সেখানে ১২০০ ছাত্রী থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতো এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তেমন সুযোগ-সুবিধা পান না। তবুও তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংগ্রাম করে এগিয়ে যাচ্ছে নিজ মহিমায়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান সকল শিক্ষার্থীদের আশা দ্রুত জগন্নাথ একটি বড় ক্যাম্পাস পাবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সুবিধাদি নিশ্চিত হবে।