আব্দুল্লাহ আল আফনান , জবি প্রতিনিধি
ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে আজ বুধবার শুরু হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পাঁচ দিনের এই উৎসব আনন্দমুখর করে তুলতে নানা আয়োজন করেছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। মণ্ডপে মণ্ডপে হবে দেবী দুর্গার আরাধনা।
এবার সারাদেশে দুর্গাপূজা হচ্ছে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপে, যা গতবারের চেয়ে ৯৪৭টি কম। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠানে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। তা সত্ত্বেও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের শঙ্কা। তবে নিরাপদে ও উৎসবের আমেজে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন তারা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির হিসাব অনুযায়ী, এবার দেশে ৩১ হাজার ৪৬১টি মণ্ডপ ও মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা হচ্ছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৪০৮। তবে ঢাকা মহানগরে এবার চারটি পূজামণ্ডপ বেড়ে ২৫২টি হয়েছে, যা গত বছর ছিল ২৪৮টি।
মঙ্গলবার ( ৮ অক্টোবর) এ দুই সংগঠনের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রস্তুতি নিতে না পারা এবং বন্যার কারণে এবার পূজার সংখ্যা কমেছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, ‘১৮টি মন্দিরে প্রতিমা ভাঙা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫টি। আর গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১২ জনকে। তিনটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রত্যাহার করা হয়েছে। এটি একটি দ্রুত সাড়া, যা আমাদের সব সময়ের দাবি। এর আগে কোনো সময় এমন সাড়া পাইনি, এবার পাচ্ছি। এটি ইতিবাচক লক্ষণ।’
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাজের অপেক্ষায় আছি, যে সমাজে সব ধর্মের সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে, অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে এবং ভয়ভীতি ও পুলিশি পাহারা ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে। আমরা পূজার মধ্যে হামলা দেখতে চাই না।’ হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবি মেনে সরকার দুর্গাপূজায় সরকারি ছুটি এক দিন বাড়িয়েছে জানিয়ে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর ছুটি। দুর্গাপূজা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সরকারি ছুটি ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ফলে মাঝখানের শুক্র ও শনিবার মিলিয়ে এবার দুর্গাপূজায় চার দিনের ছুটি মিলছে।
জয়ন্ত কুমার দেব বলেন, ‘ছুটি বাড়ানোর এমন ঘটনা অতীতে ঘটেনি।’ ছুটি বাড়ানোকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। গতকাল পরিষদের এক বিবৃতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্তকেও স্বাগত জানানো হয়। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমা ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডেতেও সরকার এমন পদক্ষেপ নেবে বলে বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করে ঐক্য পরিষদ।
দুর্গোৎসব উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ ছাড়া শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।