নবধারা প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার পাশ দিয়ে বয়ে চলা মধুমতি নদীর পানিতে অস্বাভাবিক ভাবে লবণাক্ততা বেড়েছে। এই লবণ বাতাস আর পানিতে মিশে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। নদীর নোনাপানি প্রাণীকূলের জীবনচক্রেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। দেখা দিয়েছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব। হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্তদের রোগীদের ভিড়।
মধুমতি নদীর তীরের উপজেলায় তথা বাগেরহাটের চিতলমারী ,মোল্লাহাট উপজেলা ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় লবনাক্ত পানির সমস্যা রয়েছে। টুঙ্গিপাড়া পৌরসভা ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পৌর এলাকায় ১৬ হাজার লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবারাহ করা হচ্ছে।যা চাহিদার তুলনায় সামান্য। বাকি ৫টি ইউনিয়নের মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে না। এতে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। লবনাক্ত পানি আসায় এসব এলাকার মানুষ স্থানীয় ভাবে তৈরি বোতল জাত পানি কিনে খাচ্ছেন।সামর্থ না থাকলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের পানি কিনে খেতে হচ্ছে। এছাড়া লবণাক্ত পানির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উপজেলার কৃষকেরা। শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানিতে লবণের মাত্রা বেড়ে যায়। এ সময় তারা নদী বা খালের পানি সেচ কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না। লবণাক্ত পানি ক্ষেতে দিলে জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে ফসল কমে যাওয়ার আশংকা করছেন কৃষকরা।
পাটগাতী গ্রামের কৃষক মোতালেব শেখ, গিমাডাঙ্গা গ্রামের চান মিয়া, গোপালপুর গ্রামের মাধব বিশ্বাস নবধারাকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে এই মধুমতি নদীর লবণাক্ত পানি জমিতে ব্যবহার করে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া কৃষিকাজে উৎপাদন খরচ ও বেড়ে যায়। এই সময়টা আমরা কৃষকেরা খুবই অসুবিধায় থাকি। পুকুর থেকে পাম্পের মাধ্যমে ক্ষেতে পানি দিলেও যেটুকু দরকার সেটুকু দিতে পারছি না। এ ছাড়া খাবার পানির সমস্যায় আমাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ পানি পান করে আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জামাল উদ্দিন নবধারা কে বলেন, সাধারণত নদীতে লবণ-পানি ৩ মাস থাকে। বর্ষাকালে লবণের পরিমাণ কমতে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে লবণের পরিমাণ বেশি থাকায় ফলন কম হয়। এছাড়া লবণ পানি ব্যবহার করলে জমি লবণাক্ত হতে পারে। তাই কৃষকদের নদীর পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন নবধারা কে বলেন, লবণাক্ত পানি মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আমরা এই পানি পান করতে নিষেধ করছি। এ অবস্থায় গভীর নলকূপ অথবা পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।