সামসুল হক জুয়েল, গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালীগঞ্জে পৌষ সংক্রান্তির ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল প্রায় ৬ ফুট লম্বা পাখি মাছ। মাছটির ওজন ৯২ কেজি। ৬শত টাকা কেজি দরে যার দাম ৫৫ হাজার দুই শত টাকা হেকেছেন বিক্রেতা। ৪ টি পাখি মাছ সহ মোট ১০ লক্ষ টাকার মাছের পশরা সাজিয়ে বসেছেন গাজীপুর চৌরাস্তার মা মৎস আড়তের মালিক সোহাগ শেখ। এছাড়া ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সায়েদ আলী সুপার মার্কেটের নাইম ফিসের মালিক নাইম মিয়া তিনটি বড় কাতল, আইড় বোয়াল সহ নানা প্রজাতির প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার মাছের পশরা সাজিয়ে বসেছেন। তার দোকানের একেকটি কাতলের ওজন ২৫ থেকে ৩০ কেজি যেগুলোর প্রতিটি প্রায় ৪০ হাজার টাকা দাম। ২০ থেকে ২২ কেজির প্রতিটি মাছ ২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে যার প্রতিটির মূল্য ৪০ হাজার টাকার বেশি। ঢাকার ডেমরা এলাকার মৎস ব্যবসায়ী সুমন ২০ কেজির কয়েকটি কাতল সহ বাহারি প্রায় ৭ লক্ষ টাকার মাছ নিয়ে এসেছেন।
এসব মৎস ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, তারা মেলায় ১৫ থেকে ২০ বছর যাবত মাছ বিক্রির জন্য এ বাজারে আসছেন।
উপজেলার জামালপুর, জাঙ্গালীয়া ও বক্তারপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহনার কাপাইশ গ্রামে মঙ্গলবার ১৪ ই জানুয়ারি এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রচলিত রয়েছে এ মেলায় জামাই ও শশুরেরা প্রতিযোগিতা করে বড় মাছ কেনেন। মেলা উপলক্ষে পুরো এলাকায় মেহমান ও মানুষের ঢল নামে। অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। যে জামাই যত বড় মাছ কিনে শশুরবাড়ি নিতে পারেন তার বাহবা তত বেশি।
গাজীপুরের জয়দেপুর থেকে আসা আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ৩২ কেজির একটি কাতল কিনেছেন। মেঘনা নদীর কাতল মাছটি পার্শ্ববর্তী নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার খানেপুর বাজারের ব্যবসায়ী রঞ্জিত বর্মণের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় কেনেন। বছরে একবারের এ মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা আসেন । মেলায় ভারত, বারমাসহ দেশের নানা এলাকার সামুদ্র, নদী ও খামার থেকে পাখি, রুই, কাতল, চিতল, বোয়াল, আইর, পানপাতা, রুপচাঁদা, কাইকা, বাইম, গলদা ও বাগদা চিংড়িসহ নানান জাতের বড় বড় মাছ আসে। মাছের পাশাপাশি কাঠের তৈরি আসবাব, গৃহস্থালির জিনিসপত্র, বাচ্চাদের খেলনা, হরেক রকম মিষ্টি , জিলেপি, তিলা, কদমা, ফল, কাঁচা তরকারি, খাবারের দোকানসহ নানান জিনিস পত্রের পশরা সাজান দোকানিরা। একদিনের মেলায় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মেলায় বিনোদনের জন্য পাশের গ্রাম চুপাইর উচ্চ বিদ্যালয়ে এর একটি অংশ হিসেবে নানান দোকানের পাশাপাশি নাগরদোলা, চরকি, বাচ্চাদেরর ছোট চলন্ত ট্রেন, নৌকা, যাদুঘর ইত্যাদি তিন দিন পর্যন্ত অবস্থান করে। এবছর মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মাওলানা আলী হোসেন জানান, মেলাটি প্রায় আড়াই থেকে ৩ শত বছর ধরে চলে আসছে। এ মেলা প্রতি বছর পৌষ মাস শেষে পহেলা মাঘ অনুষ্ঠিত হয়। তাই একে পৌষ সংক্রান্তির মেলা বলে।
তবে মেলায় এলাকার জামাইরা বড় বড় মাছ কিনে বিদায় একে জামাই মেলা বলে। তাছাড়া এ মেলায় মানুষ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কেনার উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসে বলে একে মাছের মেলাও বলে। মেলা উপলক্ষে এলাকার চার পাঁচ গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে মেহমানরা আসেন। এতে আত্মীয়তার সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। এখানে যেসব মাছ আসে তা হাট-বাজারে খুব কম দেখা যায়। মেলা উপলক্ষে বড় বড় মাছ নিয়ে আসে বিক্রেতারা। দেশ ও বিদেশের নানান প্রজাতির এসব মাছ ভালো দামে কেনা বেচা করতে পারে ক্রেতা বিক্রেতারা। অনেকেই একবছর আগ্রহে থাকে মেলা থেকে বড় মাছ নিয়ে আসবে বলে।
উল্যেখ্য, মেলাটি যখন শুরু হয় তখন এটি বিনিরাইল গ্রামের শেষ প্রান্তে হতো, তখন মেলার পাশেই হিজল গাছের তলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা অর্চনা হতো।
সময়ের বিবর্তনে মেলাটি ৫ শতফুট পূর্বে কাপাইশ গ্রামের শেষ প্রান্তে অনুষ্ঠিত হয়। এখন মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার জায়গায় পূজা অর্চনা না হলেও যেখানে মেলাটি শুরু হয়েছিল সেই বিনিরাইলে হিজল তলায় এখনো পূজা অর্চনা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.