নবধারা ডেস্কঃ
চলে গেলেন স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
আজ রোববার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে গুলশানে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
রাবেয়া খাতুন ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকার বিক্রমপুরে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে।
১৯৫২ সালের ২৩ জুলাই চলচ্চিত্র পরিচালক এটিএম ফজলুল হকের সঙ্গে রাবেয়া খাতুনের বিয়ে হয়। তাদের চার সন্তান- ফরিদুর রেজা সাগর, কেকা ফেরদৌসী, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ও ফারহানা কাকলী।
লেখালেখির পাশাপাশি শিক্ষকতা এবং সাংবাদিকতাও করেছেন তিনি। দৈনিক ইত্তেফাক এবং সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তার নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মাসিক পত্রিকা।
এছাড়াও তিনি জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের গঠনতন্ত্র পরিচালনা পরিষদ, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডের বিচারক প্যানেল, শিশু একাডেমির কাউন্সিল সদস্য হিসেবেও কাজ করেছেন।
সাহিত্যের সকল শাখায় ছিল তার সফল বিচরণ। তার প্রকাশিত ১০০-এর বেশি বইয়ের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গবেষণাধর্মী রচনা, ছোটগল্প, ধর্মীয় কাহিনী, ভ্রমণকাহিনী, কিশোর উপন্যাস, স্মৃতিকথা ইত্যাদি। রেডিও, টিভিতে প্রচারিত হয়েছে তার লেখা অসংখ্য নাটক, জীবন্তিকা ও সিরিজ নাটক। তার গল্পে নির্মিত হয়েছে কয়েকটি চলচ্চিত্র।
তার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস ‘মেঘের পরে মেঘ’ জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র। ‘মধুমতি’ এবং ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ও প্রশংসিত হয়েছে সব মহলে।
মুক্তিযুদ্ধের শ্বাসরূদ্ধকর দিনগুলোর কথা তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন ‘একাত্তরের নয় মাস’ (১৯৯০) বইয়ে।
রাবেয়া খাতুন সাহিত্যচর্চার জন্য পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৯৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), নাসিরুদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯৫), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), শের-ই-বাংলা স্বর্ণপদক (১৯৯৬), ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯) ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯)। ছোটগল্পের জন্য পেয়েছেন নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮)। সায়েন্স ফিকশন ও কিশোর উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), ইউরো শিশুসাহিত্য পুরস্কারে (২০০৩)। টিভি নাটকের জন্য পেয়েছেন টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭), বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড (২০০০), টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাওয়ার্ড (২০০০)। ২০১৭ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।
এই দেশ বরন্য কথাসাহিত্যিকের বিদ্যুতে নবধারা পরিবার গভীর শোকাহত। নবধারা তার বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায়।