যবিপ্রবি প্রতিনিধি,রায়হান আহমদ
আওয়ামীপন্থি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলামকে যবিপ্রবির প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর একটায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদের কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন,যশোরে ফ্যাসিবাদী আন্দোলন যবিপ্রবি থেকে শুরু হয়েছে। আর আমাদেরই ক্যাম্পাসে কিনা স্বৈরাচারের দোসর ড. সাইফুলকে প্রো-ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর আগে আমরা প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর গণস্বাক্ষর নিয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টার নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছি। অতিশীঘ্রই তার নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল নিশ্চিত না করা হলে আমরা ক্যাম্পাস অবরুদ্ধসহ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। স্বৈরাচারের দোসর নিয়োগের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে কেউ অস্থিতিশীল করে তুললে তাকেও ফ্যাসিবাদের মতো তাড়িয়ে দেওয়া হবে।
তাঁরা আরো বলেন, এই স্বৈরাচার কে নিয়োগ দেওয়া মানে দুই হাজার শহীদের রক্তে সাথে বেইমানি করা। যারা এই আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের পুর্ণবাসন করতে চায় তারা যেই হোক না কেন শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে তাদেরকে রুখে দিবে। দ্রুতই ড. সাইফুল ইসলামের নিয়োগ বাতিল করুন নয়তো সুষ্ঠু আন্দোলনকে উচ্ছৃঙ্খল করে তুললে এর দায়ভার সম্পূর্ণ প্রশাসনকে নিতে হবে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, “দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন গণতান্ত্রিক শিক্ষক পরিষদের নেতা ও ক্রপ বোটানি এন্ড টি প্রোডাকশন টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলামকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চলছে। আমরা আরো জেনেছি, আওয়ামী শাসন আমলে ২০১২ সালে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর হিসেবে পরিচিত সচিব ড. নাজমানারা খানুমের লবিংয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন ড. সাইফুল। আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের প্যানেল থেকে দুই দুইবার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য (২০১৪-১৬ ও ২০২২-২৪ সাল) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এই অধ্যাপক। এছাড়া ড. সাইফুল ইসলামের স্ত্রী ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে রাতের ভোটের মূল কারিগর ছিলেন। যার পুরস্কার স্বরূপ পরবর্তীতে তাকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। চাকুরী শেষে আবারো পুরুস্কার হিসেবে শেখ হাসিনা তাকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। জুলাই বিপ্লবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেই গত বছরের ৮ অক্টোবর ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে ড. নাজমানারা খানুম কে পিএসসির সদস্য থেকে বরখাস্ত করে। আমরা খোঁজ নিয়ে আরও জেনেছি ড. সাইফুল ইসলাম ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সুতরাং এমন একজন স্বৈরাচার ও আওয়ামী পন্থি ব্যক্তিকে আমরা যবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য হিসেবে চায় না।“ এছাড়াও শিক্ষার্থীরা শিক্ষা উপদেষ্টা , প্রধান উপদেষ্টার সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার সচিব, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার, যশোর জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিটির অনুলিপি প্রদান করেন।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেন, আমাকে শিক্ষার্থীরা একটি স্মারকলিপি দিয়েছে। যেহেতু শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডার তাই তাদের দাবি অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।
উল্লেখ্য, অধ্যাপক ডক্টর এ এফ এম সাইফুল ইসলামকে যবিপ্রবির প্রো-ভিসি বানানোর চেষ্টার খবর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সোমবার রাতে মশাল-মিছিল করেন। পরে মঙ্গলবার ও বুধবার গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করেছে। গত বুধবার রাত সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.