মোছা.কাবা কাকলি, কবি নজরুল কলেজ প্রতিনিধি
কবি নজরুল সরকারি কলেজ, ঢাকার অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজ শিক্ষার বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রায় দেড় শতাব্দীর পুরনো এই কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নও অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, সময়ের ব্যবধানে কলেজের নানা সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি মৌলিক চাহিদা — আবাসন — আজ ভয়াবহ সংকটের রূপ নিয়েছে।
বর্তমানে কলেজের নিজস্ব কোনো ছাত্রী হল নেই। ফলে জেলার বাইরে থেকে কিংবা দূরবর্তী উপজেলা বা গ্রামাঞ্চল থেকে আসা মেয়েরা শিক্ষাজীবন শুরু করতেই পড়েন চরম দুর্ভোগে। শহরের বাসাভাড়া বর্তমানে অত্যন্ত চড়া, যা একটি মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। অধিকাংশ পরিবার ব্যয় সামলাতে হিমশিম খায়। অনেকে টিউশনির মাধ্যমে নিজেদের কিছু খরচ মেটানোর চেষ্টা করে, কিন্তু টিউশনের অভাব, বিশেষ করে নতুন শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, সমস্যা আরও জটিল করে তোলে।
শুধু ভাড়ার উচ্চতা নয়, বাসা ভাড়া নেওয়ার পরেও মেয়েদের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বেশ কিছু বাড়িওয়ালা অল্পদিনের নোটিশে বাসা ছাড়তে বাধ্য করে, যা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক চাপের বড় কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা হয়রানি ও নানা ধরনের হেনস্তার শিকার হন, যা তাদের পড়াশোনার মনোযোগেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অন্যদিকে, কলেজের অভ্যন্তরীণ সুযোগ-সুবিধার সংকটও নারী শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের অভাব, ল্যাবরেটরিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট, মেয়েদের কমন রুমের স্বল্পতা — সব মিলিয়ে এখানে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তাদের জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম। পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ শৌচাগারের অভাবও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঢাকা শহরের দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিও নারী শিক্ষার্থীদের জীবনকে দুঃসহ করে তুলেছে। থাকা-খাওয়ার খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাদের অনেককেই অপুষ্টি কিংবা মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগতে দেখা যায়। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মেস বা সাবলেট অপশন বেছে নেন, যেখানে নিরাপত্তা ও সুস্থ পরিবেশ প্রায় অনুপস্থিত।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রিয়া বলেন, “মেসে আমরা প্রায়ই নানা সমস্যার মুখোমুখি হই। এখানে বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। প্রায় সময়ই গ্যাস থাকে না, ফলে রান্না করতেও অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এমনকি মাঝে মাঝে পানিরও সংকট দেখা দেয়। বাসাভাড়া অত্যন্ত বেশি, তবুও বেশিরভাগ বাড়িতেই কোনো নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই।”
একই বিভাগের সাথী বলেন, “বাসাভাড়া একদিকে যেমন বেশি, অন্যদিকে এখানে ঘনবসতির কারণে অধিকাংশ এলাকাই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। বাধ্য হয়ে এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। এর ফলে আমরা প্রায়ই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছি, যার মধ্যে ডেঙ্গু অন্যতম।
ইতিহাস বিভাগের ফারজানা বলেন, “মেসে অনেক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও বাসা পাল্টানো আমার কাছে আরও বেশি ঝামেলার মনে হয়। অনেক সময় বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়ানোর জন্য অল্প সময়ের মধ্যে বাসা ছাড়তে বলেন, ফলে আমরা বিপাকে পড়ি। ক্লাস, টিউশনি করে নিজেই যখন ক্লান্ত থাকি, তখন বাসা খোঁজা, এডভান্স পরিশোধ করা এসব কাজ বাড়তি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসবের মধ্যে নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবারও সুযোগ থাকে না।”
এই বাস্তবতায় কবি নজরুল সরকারি কলেজে একটি পূর্ণাঙ্গ ছাত্রী হল প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপদ আশ্রয়ই দেবে না, বরং তাদের মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করবে, শিক্ষা কার্যক্রমে মনোযোগ বৃদ্ধি করবে এবং ভবিষ্যতে আরও শিক্ষিত ও আত্মবিশ্বাসী নারী গড়ে তুলবে।
সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের জোরালো দাবি — অবিলম্বে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও আধুনিক আবাসন সুবিধা গড়ে তোলা হোক। তাদের স্বপ্নের উড়ান যেন কোনো দৈনন্দিন দুর্ভোগে থমকে না যায়। নারী শিক্ষার্থীদের এই নিরব কষ্টের গল্প এখন শোনা দরকার, এখনই প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.