শামীম শেখ, গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)
বয়সটা বাবা-মা'য়ের আদর-স্নেহ ও ভালবাসায় বেড়ে ওঠার। বন্ধুদের সাথে স্কুলে যাওয়ার ও খেলাধুলা করার। কিন্তু এতটুকু বয়সেই ওরা কেউ বাবা হারা, কেউ মা হারা। আবার কেউবা বাবা-মা দুজনকেই হারিয়ে ফেলেছে।
সবকিছু হারিয়ে এ রকম ১৫জন অবহেলিত শিশুর আশ্রয় হয়েছে পায়াক্ট বাংলাদেশ নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের সেফহোমে।
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অন্ধ গলিতে এ সকল শিশুদের জন্ম। এ জন্মই যেন ওদের আজন্ম পাপ হয়ে দাড়িয়েছে। অথচ এ জন্মের পেছনে নেই ওদের কোনই হাত।
রবিবার দুপুরে হঠাৎ করেই সেফহোমটি পরিদর্শনে আসেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। এ সময় তিনি শিশুদের সাথে অনেকটা সময় কাটান।তাদেরকে সংগ্রাম করে জীবনে বড় হওয়ার উৎসাহ দেন। এক সঙ্গে দুপুরের খাবার খান এবং তাদের জন্য নিয়ে আসা খেলনা সামগ্রী তুলে দেন। ওসির কাছ থেকে পাওয়া পরম মমতার মাঝে শিশুরা খনিকের জন্য খুঁজে পায় পিতার স্নেহ ও ভালবাসা।
অনুভূতি প্রকাশ করে শিশু অন্তরা,তমা, জুই, সূবর্ণা,রাহিম, শুভ সহ অন্যান্যরা জানায়, ওসি স্যারকে কাছে পেয়ে আমরা খুব খুশি হয়েছি। তিনি আমাদের সাথে খাবার খেয়েছেন, খেলনা উপহার দিয়েছেন, সুন্দর সুন্দর গল্প বলেছেন। আমরা একা নই, অসহায় নই বলে তিনি আমাদের সাহস দিয়েছেন।
আলাপকালে ওসি রাকিবুল ইসলাম বলেন, কর্ম ব্যস্ততার মাঝে এখানকার শিশুদের মাঝে আজ অন্য রকম কিছুটা সময় কাটালাম। এখানে না এলে বুঝতেই পারতাম না বাবা-মা'য়ের স্নেহ-ভালোবাসা বঞ্চিত শিশুদের জীবন কতটা কষ্টের।
তিনি আরো বলেন,কোন শিশুরই জন্মের পেছনে তার কোন হাত থাকে না। এখানকার শিশুদেরও তাই। আমি প্রত্যাশা করি ওদের জন্মটা যে ভাবেই হোক, ভবিষ্যৎ জীবনটা যেন ভাল হয়। সে জন্য সরকারের পাশাপাশি আমাদের সকলকে ওদের জন্য যথাসাধ্য কাজ করতে হবে।
পায়াক্ট বাংলাদেশ এর ম্যানেজার মজিবর রহমান জুয়েল জানান, এই সংগঠনে লালন-পালন ও লেখাপড়া করিয়ে ইতিপূর্বে তারা ১১টি মেয়েকে সামাজিকভাবে বিয়ে দিয়েছেন। তারা এখন সামাজিকভাবে সুন্দর জীবন যাপন করছে। এই সেফহোম তাদের বাবার বাড়ির মতো। ওরা বিভিন্ন সময় স্বামী-সন্তান নিয়ে এখানে বেড়াতে আসে।কয়েকদিন অবস্হান করে, আবার স্বামীর সংসারে ফিরে যায়। এখানকার একটি ছেলে কোরআনের হাফেজ হয়ে ঢাকার একটি মাদ্রাসায় উচ্চতর শিক্ষা নিচ্ছে। একটি মেয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়ালেখা করছে।
সংস্হাটিতে ২০০১-২০০৭ সাল পর্যন্ত দাতা সংস্থার সহযোগিতা ছিল। তখন এখানে শিশুদের সংখ্যা ছিল ১২০ জন। কিন্তু ২০০৭ সালের পর থেকে দাতা সংস্থার সহায়তা বন্ধ রয়েছে। তারপরও সংস্হার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আবু ইউসুফ চৌধুরী তার নিজস্ব অর্থায়নে সীমিত পরিসরে মানবিক এই প্রতিষ্ঠানটি অনাথ ও অবহেলিত শিশুদের জন্য চালু রেখেছেন। জানি এভাবে আর কতদিন চলবে।
মজিবর রহমান জুয়েল আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটের মধ্যে থেকেও তারা ৪ জন স্টাফ এখানকার শিশুদের জন্য কাজ করে চলেছেন। এখনো অনেকে অনেক শিশুরে এখানে রাখার জন্য নিয়ে আসেন। কিন্তু তারা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। ১২০ টি শিশুর থাকার ব্যবস্থা থাকলেও অর্থ সংকটে নতুন করে কোন বাচ্চা ভর্তি নিতে পারেন না। ফলে এই পল্লীর শিশুর শিশুর ভবিষ্যৎ আজ বড়ই অনিশ্চিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য সরকারী - বেসরকারি পর্যায় ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.