রুহুল আমিন, যশোর প্রতিনিধি
যশোরে হত্যার ঘটনা বেড়েই চলেছে। গত ৭ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ৭ দিনে জেলায় ৬ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। স্বজনের হাতে স্বজন, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কোন্দল ও পরকীয়ার জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক বাড়ছে। পুলিশ বলছে, বিচ্ছিন্নভাবে এসব হত্যাকান্ড ঘটেছে। অধিকাংশ ঘটনার মোটিভ উদঘাটন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শনিবার (১৪ জুন) রাতে অভয়নগর উপজেলার নাউলি গ্রামে কুয়েত প্রবাসী হাসান শেখকে (৩৫) গলাকেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। রোববার সকালে নাউলি গ্রামের তবিবুর রহমানের মাছের ঘেরের পাড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত হাসান নাউলি গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি ৬ মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন। ২ মাস পর কুয়েতে চলে যাওয়ার কথা ছিল হাসানের। নিহতের বড় ভাই মুন্না জানান, হাসান প্রায় রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেন। ঘটনার রাতেও আড্ডা দিতে গিয়ে আর বাড়ি ফিরে আসেননি। কি কারণে তাকে খুন করা হয়েছে এর কারণ অজানা। হাসানের সাথে এলাকার কারও সাথে তেমন কোন শত্রুতাও ছিল না। যে তাকে এমন নির্মমভাবে হত্যা করতে হবে। পুলিশের ধারণা, পরকীয়ার জের ধরে হত্যাকাণ্ডটি হতে পারে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
একই দিন (শনিবার) চৌগাছা উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পুড়াহুদা গ্রামের ছোট ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে মারা যান বড় ভাই রবিউল ইসলাম। তিনি পুড়াহুদা গ্রামের রফিউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে। নিহত রবিউলের ছেলে খালিদ হাসান জানান, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি নিয়ে তার পিতা রবিউলের সঙ্গে চাচা সেনাবাহিনীর বহিস্কৃত সদস্য ইব্রাহিমের বিরোধ চলে আসছিল। শনিবার (১৪ জুন) সকালে ইব্রাহিম কাউকে কিছু না জানিয়ে রান্নাঘরের টিন বিক্রি করে দেয়। এই নিয়ে তারা দুই ভাই গোলযোগে জড়ায়। এসময় ইব্রাহিম ক্ষুব্ধ হয়ে বড় ভাই রবিউলের বুকে ছুরিকাঘাত করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০ টার দিকে মারা যান রবিউল।
গত ১০ জুন মঙ্গলবার রাতে শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর বাজারে লিটন হোসেন (৩০) নামে এক যুবককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তিনি দুর্গাপুর গ্রামের আজগর আলীর ছেলে। নিহতের স্বজনরা জানান, লিটন দুর্গাপুর বাজারে বসে চা পান করছিলেন। এসময় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জের ধরে স্থানীয় সেলিম, রমজানসহ আরও কয়েকজন হামলা চালিয়ে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। শার্শা থানা পুলিশ
১২ জুন অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন দুর্গাপুর গ্রামের মৃত কাশেম আলীর দুই ছেলে আজগার আলী ও শমসের আলী একই গ্রামের সামসুল হক ও আব্দুল হক।
৯ জুন বিকেলে যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের ডাকাতিয়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মইন উদ্দিন (৪৫) নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করে চাচাতো ভাই আশিকসহ কয়েকজন। নিহত মইন উদ্দিন ডাকাতিয়ার আজিজ মোল্যার ছেলে।এ সময় নিহতের বড় ভাই জমির উদ্দিনকে (৫০) ছুরিকাঘাতে হত্যা চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় ৬ জনের নামে মামলা হয়। পুলিশ নিহতের চাচি আলেয়া খাতুনকে আটক করেছে। বাকি ৫ আসামি পলাতক রয়েছে। তারা হলেন নিহত মইনের চাচাতো দুই ভাই আশিক, সজিব, চাচা মাজিদ মোল্যা ও প্রতিবেশী জসিম ও ফারুক।
গত ৭ জুন ঈদের দিন সন্ধ্যায় শার্শা উপজেলার বেনাপোল পোর্ট থানার ডুবপাড়া গ্রামে ককটেল হামলায় আব্দুল হাই মনা (৪০) নামে বিএনপির এক নেতা খুন হন । তিনি ডুবপাড়া গ্রামের আমির আলীর ছেলে ও ডুবপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির কার্যকরী সদস্য। নিহতের স্বজনরা জানান, ঈদের নামায আদায় করাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের সাথে আব্দুল হাই মনার দ্বন্দ্ব হয়। এরই জের ধরে সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা ককটেল হামলা চালিয়ে মনাকে খুন করে। এ ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। ৮ জুন রাতে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে হত্যার সাথে জড়িত এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেফতার করে। তারা হলেন যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ছোট মেঘলা গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে আহসান কবির ওরফে সোহেল রানা ও বেনাপোলের ডুবপাড়া গ্রামের মমিনুর রহমানের ছেলে রিপন হোসেন ওরফে বাতু।
এদিকে, ঈদের দিন (৭ জুন) সোহানা (১০) নামে এক শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ফুফাতো ভাই নাজমুস সাকিব ওরফে নয়ন। যশোরের ঝিকরগাছায় উপজেলার হাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনাটি ঘটে। নিহত সোহানা উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের মেয়ে ও বায়সা চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
নিহতের স্বজনরা জানান, ঈদের দিন সোহানা হাড়িয়া গ্রামে ফুফু বাড়ি বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরের দিন একটি পুকুরে তার লাশ ভেসে ওঠে। লাশের ময়নাতদন্ত যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে সম্পন্ন হয়। ফুফুর বাড়ির স্বজনরা তখন প্রচার করেছিলেন, পুকুরের পানিতে ডুবে সোহানার মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু সোহানার পিতা আব্দুল আজিজের সন্দেহ হয় তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। ফলে আব্দুল আজিজ অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ঝিকরগাছা থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। সোহানার মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটনের পর ১১ জুন সন্ধ্যায় ঝিকরগাছা থানার এসআই পলাশ দাসের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে নয়নকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন তাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। নয়ন ঝিকরগাছা উপজেলার হাড়িয়া গ্রামের ইলিয়াস রহমানের ছেলে।
এই বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন ও অর্থ) নূর ই আলম সিদ্দিকী জানান, বিচ্ছিন্নভাবে হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো ঘটেছে। হত্যাকান্ডগুলো একে অপরের সাথে সম্পর্কিত নয়। পুলিশ প্রতিটি হত্যার মোটিভ উদঘাটন ও জড়িতদের আটক করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কোন কারণ নেই। পুলিশ অপরাধ দমনেন সর্বদা সোচ্চার। জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সজাগ রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.