যশোর প্রতিনিধি
যশোরে নগদের কথিত অর্ধকোটি টাকা ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছিল টাকা বহনকারী ড্রাইভার সাজু নিজেই। আর ছিনতাই নাটকে অভিনয়ে সাথে নিয়েছিল বন্ধুদের। পুলিশের কাছে এমন কথা স্বীকার করেছে সাজু। ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সবকিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে যশোর পুলিশ। উদ্ধার হয়েছে ৩৩ লাখ ৫ হাজার ৫শ’ টাকা ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত সেই মোটরসাইকেল, চাকু, চাপাতি ।
১৭ জুন সকালে যশোর মণিরামপুর উপজেলার কুয়াদা জামতলা মোড়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় নগদ কোম্পানির ৫৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ করা হয়েছি। নগদ যশোরের একটি ডিলার অফিসের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম ও প্রাইভেট ড্রাইভার মোহাম্মদ সাজুর এলোমেলো বক্তব্যে সন্দেহে হলে রাতে রবিউল ইসলামসহ নগদের ৪ জনকে হেফাজতে নেয় যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখা ডিবি।
শাখার ম্যানেজার রবিউল ইসলামের সকালের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রাইভেটের গতিরোধ করে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আসা ৪ দুর্বৃত্ত এই টাকা ছিনিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সারা দিনের তদন্তে ডিবির চৌকস টিমের হাতে তথ্য পৌঁছায়, ঘটনা উল্টো হতে পারে। কার্যত নগদেও ওই রবিউলসহ আরো কয়েকজন মিলে তাদেরই পরিচিত কয়েকজনকে হেলমেট পরিয়ে ছিনতাই নাটক সাজিয়েছে এমন তথ্য আসে। রাত ৯ টার দিকে ৪ জনকে হেফাজতে নিয়ে ঘটনার রহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করে পুলিশ।
হেফাজতে নেয়াদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ড্রাইভার সাজু স্বীকার করে যে, প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আনা নেয়া করতে গিয়েই তার লোভ তৈরি হয় এবং এ ছনিতাই নাটক সাজায়।
পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে সেখানে ৫৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের কথা বলা হলেও সেখানে ছিলো ৩৫ লাখ টাকা। বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশের কনফারেন্সরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকি।
আটকককৃতরা হলেন, ড্রাইভার পোস্টঅফিসপাড়ার ইউসুফ আলী সাজু, ঝিকরগাছার বাকড়া দিনগানা গামের রনিগাজী, খোষালনগর গ্রামের সাগর হোসেন, বাকড়া দিকদানা গ্রামের সুজন ইসলাম,খোষালনগরের সোহেল রানা, বাকড়া দিকদানার ইমাদুল গাজী ও একই গ্রামের নাসিম গাজি।
অতিরিক্তপুলিশ সুপার নুর ই আলম সিদ্দিকি বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সাথে নিয়ে মনিরামপুর থানা পুলিশ, ডিবি ও সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেল মাঠে নামে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তারা প্রথমে ঝিকরগাছাথেকে সাগরকে আটক করে। এরপর সাজুর নাটক ফাঁস হয়ে যায়। পরে ইমদাদুল গাজির কাছ থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫শ’ টাকা ও সুজন ইসলামের কাছথেকে আরও ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। একে একে সকলকে আটক ও মুল রহস্য উঠে আসে ডিবির তদন্তে। এছাড়া জানা যায়, সেখানে ৫৫ লাখ টাকা না ছিলো ৩৫ লাখ টাকা। এখনো পর্যন্ত এ ঘটনার সাথে ম্যানেজার রবিউল ইসলামের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণ পাননি তারা। একই সাথে নগদের যশোরের ডিস্টিবিউটরের এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততা আছে কিনা সে বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, মণিরামপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এমদাদুল হক।
ডিবির ওসি মঞ্জুরুল হক ভুইয়া, মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বাবুলুর রহমানের স্বমন্বয়ে অভিযানিক আরও অংশ নেন ডিবির এসআই রাজেশ কুমার, কামাল হোসেন, মাইদুল ইসলাম রাজীব ও বিপ্লব সরকার।
উল্লেখ্য ১৭ জুন সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে কুয়াদা এলাকায় জোরেসোরে প্রচার হয়, শাখা ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলামের (প্রাইভেটকার নাম্বার ঢাকা মেট্টো গ ১৫৫৯২৩) প্রাইভেটের গতিরোধ করে ৫৫ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। একাউন্টেন্ট কাজী মমিনুর ইসলামের কাছ থেকে ৫৫ লাখ টাকা বুঝে নিয়ে মণিরামপুরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় জামতলা মোড়ে পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলযোগে আসা ৪ দুর্বৃত্ত তার প্রাইভেটের সামনে এসে গ্লাস ভাঙচুর করে এবং রবিউলকে নামিয়ে মারধোর করে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
রবিউল ইসলাম ৯৯৯ ফোন দিলে পুলিশ আসে। ওই সময় তিনি পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছে জানান, তিনি ৫৫ লাখ টাকা নিয়ে মণিরামপুর শাখা সাব অফিসের আবু সাজিদের কাছে পৌঁছে দিতে যাচ্ছিলেন। আর পথিমধ্যে তাদের উপর হামলা হয়েছে। তার উপর আঘাত করা হয়েছে, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
এরপর ওই ঘটনার খবর আরো ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থল পরির্দশন করেন মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ বাবলুর রহমান খান ও জেলা ডিবির একটি চৌকস টিম। তারা ঘটনাস্থল, ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি দেখেন। এছাড়া ভুক্তভোগী রবিউল ইসলাম ও ঘটনাস্থল এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে ঘটনাটি পরিস্কার হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে রবিউল ও প্রাইভেট ড্রাইভার সাজু আহত না হওয়ায় সন্দেহ হয় ছিনতাই ঘটনা নিয়ে।
দিনভর পুলিশ ও ডিবির টিম ওই ঘটনার সত্যতা নিয়ে ব্যাপক খোঁজখবর নেন। ঘটনাস্থল, গাড়ির অবস্থান, নগদের ম্যানেজার আহত না হওয়া, স্থানীয়রা কেউ না দেখা, এমনকি ৫৫ লাখ টাকার খবর ছিনতাইকারীরা জানবে কি করে এসব অ্যাঙ্গেল থেকে খোঁজ নিয়ে ডিবি প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করে ঘটনা সাজানো হতে পারে। আর ঘটনায় নগদের লোকজনই জড়িত থাকতে পারে। এ সন্দেহ থেকে নগদ কর্মকর্তা ও টাকা বহনে সংশ্লিষ্ট নগদের ৪ জনকে রাতে হেফাজতে নেয়ার পর বেরিয়ে আসে সব তথ্য।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.