কাশিয়ানী প্রতিনিধিঃ
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুর রহমান। কিন্তু নামের বানান ‘শ’ এর স্থলে ভুলে ‘ম’ হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে ভাতা ভোগ করছে শাহাবুর রহমানের আপন বড়ভাই মাহাবুর রহমানের পরিবার। এমন ঘটনা ঘটেছে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল ইউনিয়নের পাথরঘাটা গ্রামে। তবে দুই ভাইয়ের কেউ-ই জীবিত নেই। শাহাবুর দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও স্ত্রী ও সন্তানরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন স্বীকৃতির দাবিতে। এ ঘটনায় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার পাথরঘাটা গ্রামের শাহাবুর রহমান ১৯৬৯ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের করাচি থেকে পূর্বপাকিস্তানে ছুটিতে এসে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। ১৯৭৪ সালে সেনাবাহিনী থেকে চাকরি ছেড়ে পালিয়ে আসেন। সেনা মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য ১৯৯৯ সালে ঘাটাইল সেনানিবাস থেকে তাকে পরপর তিনটি চিঠি পাঠানো হয়। এরই মধ্যে তার নাম সেনাবাহিনী উল্লেখ করে লাল মুক্তিবার্তার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। যার গেজেট নম্বর ৩২৩৯, মুক্তিবার্তা লাল বই নম্বর ০১০৯০৪০৭৭৬, সনদ নম্বর ম-১৭৯৬২২। কিন্তু মুক্তিবার্তায় শাহাবুর রহমানের স্থলে একটি আক্ষরিক ভুলে মাহাবুর রহমান লেখা হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাহাবুরের বড়ভাই শেখ মাহাবুবুর রহমান ২০১০ সালে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন। এ অবস্থায় গেজেট সংশোধনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে দুই দফা আবেদন করেন শাহাবুর রহমান। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তের নির্দেশ দেন কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে গেজেট সংশোধন হয়ে মাহাবুর রহমানের স্থানে শাহাবুর লিপিবদ্ধ হয়ে গেজেট প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছায়ের সময় তৎকালীন ইউনিয়ন কমান্ডার মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। ঘুষ না দেওয়ায় শাহাবুর রহমানের পরিবর্তে মাহাবুর রহমানের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর থেকে শেখ মাহাবুর রহমানের নামে ভাতা চালু হলেও শাহাবুরের ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় শাহাবুর রহমানের ছেলে নাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাশিয়ানী ইউএনওর নির্দেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে সাক্ষীগণের সাক্ষ্য ও সরেজমিন তদন্তপূর্বক শাহাবুর রহমানের স্বপক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এদিকে মাহাবুর রহমানের মুক্তিবার্তা লাল বইয়ে শেখ মাহাবুর রহমান সেনাবাহিনী লেখা। কিন্তু তিনি কখনই সেনাবাহিনীতে চাকরি করেননি। তিনি যুদ্ধকালীন পুলিশ বাহিনীতে চাকরিরত ছিলেন। মাহাবুর রহমানের ৩৫ বছর চাকরি জীবনে তিনি কখনো নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেননি। তার সার্ভিস বুকে কোথাও লেখা নেই তিনি যুদ্ধ করেছেন। এছাড়া তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও পুলিশে তার নাম শেখ মো. মাহাবুবুর রহমান লেখা রয়েছে। কিন্তু তিনি শেখ মাহবুর রহমান (সেনাবাহিনী) নামে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। যুদ্ধ না করেও তার নামে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হয়? এমনটাই প্রশ্ন এলাকার সাধারণ মানুষের।
যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী মিয়া বলেন, শাহাবুর রহমান ১৯৭১ সালে ফুকরা এলাকায় আমার অধীনে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি তার যুদ্ধাকালীন কমান্ডার ছিলাম।
মাহাবুবুর রহমানের স্ত্রী রেবেকা মাহাবুব নবধারা কে বলেন, আমার স্বামী পুলিশে চাকরি করতেন। তবে আমার স্বামীর নাম মুক্তিবার্তায় সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায় নবধারা কে বলেন, এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা খুবই দুঃখজনক। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।