বাকেরগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি
বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) আলমগীর হোসেনের বিরুদ্ধে এক প্রাইভেটকার চালককে মাদক দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টাসহ বিস্তর অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এস আই আলমগীর কর্তব্য পালনের নামে অতিরিক্ত প্রভাব খাঁটিয়ে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেপ্তারের চেষ্টাসহ হয়রানির অভিযোগে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নিয়ামতি ইউনিয়নের মধ্যম মহেশপুর গ্রামের ভুক্তভোগী মোঃ মোশারফ হোসেন ব্যাপারীর স্ত্রী নাছিমা বেগম।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, নাছিমা বেগমর স্বামী মোশারফ বেপারী ঢাকায় ভাড়ায় প্রাইভেটকার চালায়। তিনি ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে গত ১ জুন রাত ১১ টায় মোশারফ ব্যাপারীর বাড়িতে যায় এস আই আলমগীরসহ তিন পুলিশ সদস্য। ওই রাতে জোরপূর্বক তার ঘরে সাদা পোষাকে পুলিশের দুই সোর্স প্রবেশ করে তার স্বামীকে টানাটানি করে ঘরের বাইরে নামানোর চেষ্টা করে। তিনি প্রতিবাদ জানালে পরবর্তীতে এসআই আলমগীর আরো দুইজন সাদা পোশাকধারী কনস্টেবলের সহযোগিতায় তার হাতে হ্যান্ডকাফ পড়ায়। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয়রা তার বাড়িতে জড় হয়ে পুলিশের কাছে জানতে চায় তাকে গ্রেপ্তার করার কারণ কি? এ সময় এস আই আলমগীর বলেন, তার ঘরে মাদক রয়েছে। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তখন এলাকাবাসীর উপস্থিতিতে পুলিশ ঘর তল্লাসি করে মাদকের কোন অস্তিত্ব পায়নি। পরে এলাকাবাসীর তোপের মুখে এস আই আলমগীর মোশারফের হাতের হ্যান্ডকাফ খুলে দেয়।
এস আই আলমগীর মাদক দিয়ে ড্রাইভারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করায় পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নারী নাছিমা বেগম।
এছাড়াও এস আই আলমগীর বাকেরগঞ্জ থানায় যোগদানের পর থেকে কর্তব্য পালনের নামে অতিরিক্ত প্রভাব খাঁটিয়ে নানারকম অনিয়ম-দুর্নীতি করে রাতারাতি লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করছেন। তার বাড়ি বাকেরগঞ্জ উপজেলার পার্শ্ববর্তী মির্জাগঞ্জ থানায়। যে কারনে তিনি কতিপয় সোর্স নিয়োগ দিয়ে সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতির নামে হয়রানি করে আসছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনায় পক্ষপাতিত্ব, নিরীহ মানুষকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো, আসামির পরিবারের সদস্যদের হয়রানি ও অবৈধ অর্থ গ্রহণ করে আসছেন তিনি। এছাড়াও থানায় তার হাতে কোনো লিখিত অভিযোগ আসলে প্রত্যেকটা অভিযোগের ক্ষেত্রে তদন্তে গেলে উভয় পক্ষ থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নিয়ামতি ইউনিয়নে মধ্যম মহেশপুর গ্রামের প্রবাসী আব্দুল জলিল জোমাদ্দারের স্ত্রী ভুক্তভোগী মাহিনুর বেগম জানিয়েছেন, হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে গায়ের জোরে মামলাভুক্ত জমি নানাভাবে জবর দখল করছে তাদের প্রতিপক্ষ মোঃ জাহাঙ্গীর চৌকিদার। ওই ঘটনার বিষয় তিনি বাকেরগঞ্জ থানায় দুইটি লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযোগ তদন্তে যায় এস আই আলমগীর। লিখিত অভিযোগ তদন্তের নামে এস আই আলমগীর প্রবাসীর স্ত্রীর বাড়িতে তিনবার গিয়ে তার কাছ থেকে তদন্তের খরচের নামে ৩ হাজার ৫ শত টাকা নিয়েছেন। তদন্তের নামে খরচের টাকা নিলেও তিনি কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে এস আই আলমগীর বলেন, তার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের নিকট লিখিত অভিযোগ হয়েছে বলে তিনিও শুনেছেন। তবে তিনি জানান গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মোশারফ ব্যাপারীর বাড়িতে মাদক উদ্ধারের অভিযান পরিচালনা করেন। কিন্তু তার ঘরে কোন মাদক না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। একজন নিরপরাধ লোককে মাদক উদ্ধারের আগেই কেন হ্যান্ডকাফ পড়ানো হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নিশ্চুপ থাকেন।
বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আবুল কালাম আজাদ বলেন, এস আই আলমগীরের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। আরো কিছু অভিযোগ আপনাদের মাধ্যমে শুনেছি।সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এস আই আলমগীরের অভিযোগের বিষয় জেলা পুলিশ সুপার মোঃ শরিফ উদ্দিনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, নাছিমা বেগমের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। থানার কোন অফিসার দুর্নীতিগ্রস্ত হলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.