মাদারগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার ২৮ টি সমবায় সমিতির ৩০ হাজার গ্রাহকের প্রায় তিন হাজার কোটি জমাকৃত আমানত  উদ্ধারের দাবিতে গত সোমবার (২৩জুন) উপজেলা পরিষদ ঘেরাও কর্মসূচী পাণন করেছেন গ্রাহকরা।সেই সময় উপজেলায়  সকল সরকারি অফিস এর কার্যক্রম বন্ধ করে ৩ দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও কর্মসূচি ঘোষণা করছে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা।

জানা গেছে, মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতির প্রায় ৫ হাজার আন্দোলনকারী সদস্য  পৌর এলাকার বালিজুড়ী বাজারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে জড়োহয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থানকরে।সে খানে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা  সকল  সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ব-স্ব দপ্তর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। ফলে সেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে  সকল প্রকার সেবাগ্রহীতাদের।

এছাড়া আন্দোলনকারীরা সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহে বাঁধা প্রদান  করেন এবং মানবজমিন মাদারগঞ্জ উপজেলা  প্রতিনিধি মোবাইলে মিছিলের ভিডিও ধারণ করার সময় তার ফোনটি কেড়ে নেয় এক গ্রাহক।পর্বতিতে ফোনটি ফেরত দেওয়া হয়।

অপরদিকে দৈনিক দিনকালের মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আনিছুর রহমান আইয়ুব আলীকে লাঞ্ছিত করার চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যপারে মাদারগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে নিন্দা জানানো হয়।  আন্দোলনকারীরা  বিকাল ৪টা পর্যন্ত  উপজেলা পরিষদ ঘেরাও করে সমাবেশ চালিয়ে যায়। মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচি সোমবার দুপুর থেকে আগামী ৩ দিন এ বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষনাদেন।

তারা জানান,মাদারগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে সমবায় কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে প্রায় শতাধিক প্রতারক ব্যক্তি বিভিন্ন নামে সমবায় সমিতির রেজিষ্টেশন নিয়ে উচ্চ মুনাফার লোভ দেখিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো।   গত ২০২৩ সালে ২৮ টি সমবায় সমিতি ৩০ হাজার আমানতকারীর প্রায় ৩ কোটি টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দেয়।   এরপর থেকেই গ্রাহকরা স্থানীয় প্রশাসনসহ জামালপুর জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে আমানতের টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। কিন্তু  উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা বারবার আমানতের টাকা আদায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের আন্দোলন থেকে বিরত রেখে পরবর্তীতে রহস্যজনক কারণে পিছিয়ে যায় বলে  আমানতকারিরা অভিযোগ করেন।এ অবস্থায় ঈদের পর থেকে প্রতারিত আমানতকারীরা মরিয়া হয়ে আন্দোলনে নেমেছেন।

টাকা উদ্ধার  কমিটির আহ্বায়ক সাবেক  চেয়ারম্যান শিবলুল বারী রাজু   জানান, টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রশাসনের লোকজন কোন সিদ্ধান্ত না দিলে সোমবার থেকে  ৩ দিনের উপজেলা পরিষদে অবস্থান কর্মসূচি চলবে বলে ঘোষণা দেন।তিনি আরো বলেন, যেহেতু আগামী  ২৬জুন থেকে এইচএসসি পরীক্ষার তাই  আন্দোলনের কর্মসূচি সীমিত করা হয়েছে। তিনি দুঃখ করে বলেন, জামালপুর জেলা প্রশাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা দেড় মাস আগে নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে টাকা আদায় করে দেওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।তার কথায় আমানতকারীদের আন্দোলন থেকে বিরত রেখেছিলেন। কিন্তু দুওখের বিষয়  তিনি তার কথা রাখেননি।

এবিষয়ে মাদারগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল আমিন জানান, আন্দোলনকারীরা তাকে জোর করে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে। পরে তিনি একটি স্কুল পরিদর্শনে গিয়েছেন। অফিসের অন্য কর্মচারীদেরকেও বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল্লাহ সাইফ  বিক্ষোভকারীদের সমাবেশ তার  বক্তব্যে বলেন, সব কিছু সহ্য করা যায়, কিন্তু টাকার শোক সহ্য করা যায় না! আর টাকা না দেওয়ার বিকল্প কোন উপায় নেই।

তিনি আরও বলেন, মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতির সকল পার্টনারদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের   প্রত্যকেরই  সম্পদ আছে। আপনারা সেই সম্পদ থেকে গ্রাহকদের ঋণ পরিশোধ করুন।