হুমায়ুন কবির মিরাজ, বেনাপোল
জলবায়ু পরিবর্তন, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ধান চাষে কম লাভের কারণে সীমান্তঘেঁষা যশোরের শার্শা উপজেলায় কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন লাভজনক সবজি চাষের দিকে। এর মধ্যে মুখিকচু চাষ হয়ে উঠেছে সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক ফসল। কম খরচ, সহজ পরিচর্যা আর বাজারে ভালো দামের কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে এই দেশীয় সবজি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে শার্শায় ১২৫ হেক্টর জমিতে মুখিকচু চাষ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৫ হেক্টর বেশি। নিজামপুর ইউনিয়ন এ চাষের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলেও কেরালখালী, বসন্তপুর, পাড়িয়ারঘোপ, কন্দর্পপুর ও ভায়নাসহ বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে কচু।
মাঠপর্যায়ের কৃষকরা জানাচ্ছেন, গড়ে প্রতি বিঘায় ৭০-৮০ মণ কচু পাওয়া যাচ্ছে। খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি ৪৫-৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লাভ হচ্ছে, যা ধানের চেয়ে অনেক বেশি। কেরালখালির কৃষক রমজান আলী বলেন, “আগে ধানে কোনো লাভ হতো না। এখন কচু চাষে কম খরচে ভালো আয় হচ্ছে। এবার প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি।”
মুখিকচু চাষ স্থানীয় নিম্নআয়ের মানুষের জন্যও তৈরি করেছে মৌসুমি কর্মসংস্থান। জমি পরিচর্যা, কচু তুলা, পরিস্কার ও বাজারজাতকরণে বহু নারী-পুরুষ খণ্ডকালীন কাজ করে বাড়তি আয় করছেন।
বাসাবাড়ি বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানান, বাজারে আগাম কচু উঠতে শুরু করেছে, দামও ভালো। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই বাজার মুখিকচুতে ভরে যাবে।
তবে বাজার ব্যবস্থাপনায় কিছু অসুবিধার কথাও শোনা যাচ্ছে। এক শ্রেণির দালালচক্র চাঁদাবাজি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এ বিষয়ে নিজামপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, “চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বাজার সংযোগে সহায়তা করা হচ্ছে। গ্রেডিং ও সংরক্ষণে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা ন্যায্য মূল্য পান।”
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, মুখিকচু চাষে এখনও কোনো মাঠপ্রদর্শনী না থাকলেও কৃষি বিভাগ নিয়মিত প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিচ্ছে। ভবিষ্যতে উন্নত জাত উদ্ভাবন ও রপ্তানির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফলে সীমান্ত অঞ্চলে মুখিকচু চাষ নতুন করে কৃষি অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে। কৃষক, কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই নীরব সবজি বিপ্লব আরও টেকসই হলে শার্শা হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম সবজি উৎপাদনকেন্দ্র।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.