হুমায়ুন কবির মিরাজ, বেনাপোল
যশোর-বেনাপোল জাতীয় মহাসড়কের ঝিকরগাছা অংশে শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ গাছ থেকে আবারও ভেঙে পড়ল বিশাল একটি ডাল। মঙ্গলবার (১ জুলাই) রাত ১১টার দিকে কোনো ধরনের ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াই নাভারণ কলোনি এলাকায় সড়কের ওপর আছড়ে পড়ে ডালটি। মুহূর্তেই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
ডাল পড়ে যাওয়ার পর স্থানীয় বাসিন্দারা হাতে দা-কুড়াল নিয়ে রাস্তায় নামেন এবং দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন। খবর পেয়ে ঝিকরগাছা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে রওনা দেয়। প্রায় আধঘণ্টার প্রচেষ্টায় ডালটি সরিয়ে আনা সম্ভব হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেকেন্ড কয়েকের ব্যবধানে একটি ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারত। “সামনের ট্রাকটা ঠিক সময়মতো চলে যাওয়ায় বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলাম,” বলেন নাভারণের বাসিন্দা শাহ আলম।
সাংবাদিক ও নাগরিক অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, “এই সড়কটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার অন্যতম প্রধান রুট। অথচ দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শত শত ঝুঁকিপূর্ণ গাছ দিনের পর দিন প্রাণহানির শঙ্কা তৈরি করে চলেছে। আমরা বারবার প্রশাসনকে জানিয়েছি, চিঠি দিয়েছি, অথচ সময়মতো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “এটি কেবল দায়িত্বে অবহেলা নয়—এটি সরাসরি জননিরাপত্তার সঙ্গে খেলা। আজ যদি বড় কোনো প্রাণহানি ঘটত, তখন প্রশাসন জবাব দিত কাকে? এখনই সময়, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কেটে ফেলা হোক।”
এর আগে, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল যশোর জেলা পরিষদ থেকে ঝিকরগাছা, শার্শা ও কেশবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়ে এন-৭০৬ মহাসড়কের পাশে জেলা পরিষদ মালিকানাধীন জমিতে থাকা মৃত ও অর্ধমৃত গাছ অপসারণের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই চিঠিতে সহযোগিতার জন্য স্থানীয় থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তাও চাওয়া হয়।
শার্শা উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণে চোখে পড়ার মতো অগ্রগতি হলেও, ঝিকরগাছায় কার্যত কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর প্রশাসনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার (আজ) থেকেই ঝিকরগাছা অংশে গাছ কাটার কাজ শুরু করা হবে।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভূপালী সরকার বলেন, “বন বিভাগের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইতোমধ্যে অনুমোদনের অপেক্ষা ফুরিয়েছে। কাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ অপসারণ কার্যক্রম শুরু করা হবে।”
উল্লেখ্য, যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম ব্যস্ততম জাতীয় রুট। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে হাজার হাজার যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। অথচ, মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী গাছগুলোর একটি বড় অংশই মৃত, অর্ধমৃত কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
জনসাধারণের ভাষ্য, গাছ পড়ে প্রাণহানির পর যেন প্রশাসনের টনক না নড়ে—সেই পুরনো চিত্র এখন আর সহ্য করার মতো নয়। ঝড়বৃষ্টি ছাড়াই ডাল ভেঙে পড়া এই ঘটনা ফের প্রমাণ করল, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এখন দেখার বিষয়—ঘোষিত সময় অনুযায়ী গাছ কাটার কার্যক্রম সত্যিই শুরু হয় কি না।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.