যশোর প্রতিনিধি
যশোর জেলা স্কুল বটতলা মোড় থেকে সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের সামনের শাহ আবদুল করিম সড়কে চলমান ড্রেন প্রকল্পের খুঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠছে। শহরের অন্যতম প্রধান ব্যস্ততম সড়কটির মাথার অংশে রাস্তা জুড়ে কাঁদামাটি ভরাট থাকায় পথচারি ও যান চলাচল চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিকল্প পাশের সার্কিট হাউসের পেছনের রাস্তাটি যথেষ্ট চাওড়া না হওয়ায় সমস্যা সম্মুখিন হতে হচেছ মানুষকে। বর্ষার সময় যশোর পৌরসভার টেন্ডার আহবান এই রাস্তাটির বেলায় সঠিক হয়নি দাবি করে চলমান কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। এছাড়া মাটি তোলার পরপরই সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করে মানুষ চলাচল নিশ্চিত করারও দাবি তাদের।
জরেজমিনে দেখা গেছে, চলমান ড্রেন প্রকল্পটি আগামি ছয় মাস পর্যন্ত সিউিলের সময়সীমা থাকায়, এ লম্বা সময় জনদুর্ভোগ কমাতে কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। একই সাথে দ্রুত ওই রাস্তাটি সংস্কার কার্যক্রমে হাত দেয়ারও দাবি উঠেছে। কেননা একটু বৃষ্টি হলেই এমএম কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে খড়কী কবরন্থান পর্যন্ত অংশে হাটু পানি, মাজা পানি বেধে যাচেছ। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা পৌরসভা ঘোরাও করেছে সম্প্রতি।
তথ্য মিলেছে, বর্ষা মৌসুমে এমএম কলেজের (দক্ষিণ গেট খড়কী) সামনের রাস্তাটি বিগত কয়েক বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগি। অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা রাস্তা ও ড্রেন আলাদা করতে কঠিন হয়ে পড়ে। পানি জমে থাকার কারণে বিটুমিনের আস্তরণ উঠে গিয়ে বড়বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এতে কলেজে যাতায়াতকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ খড়কী এলাকার মানুষ এমনকি অন্যান্য এলাকার পথচারি মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এক দশকের বেশি সময় ধরে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ার কারণে জোরেসোরে দাবি ওঠে সংস্কারের। আার এ দাবির মুখে সম্প্রতি টেন্ডার আহবান করা হয়। তবে প্রথমে ওই সড়কের দেড় কিলোমিটারের মত রাস্তার ড্রেন প্রকল্পে টেন্ডার আহবান করা হয়। সে মোতাবেক কাজ পেয়ে খুঁড়াখুঁড়ি শুরু করেছে এস ই আর ই (জেভি) কন্সট্রাকশন। জিলা স্কুল মোড়ের বট তলাংশ থেকে ড্রেন প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে শুরুতেই জনদুভোগ শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার মানুষ। প্রথম দুদিন রাস্তা আটকে কাজ করা হয়েছে। মাটি কাঁদা রাস্তায় ফেলায় রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প রাস্তা খুঁজতে গিয়ে কিংবা ঘুরে যেতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন মানুষ। শুধু ড্রেন নয় রাস্তাটি উঁচু করে সংস্কার করার দাবি ওই এলাকাবাসী তথা সরকারি এমএম কলেজ শিক্ষার্থীদের। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর সরকারি এমএম কলেজ শাখার উদ্যোগে কয়েকটি কর্মসূচিও পালন করা হয়। ক’দিন আগে ‘লং মার্চ টু পৌরসভা’ শিরোনামে কলেজের সামনের সড়ক থেকে পৌরসভার উদ্দেশ্যে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এই পদযাত্রায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে অংশ নেন স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষকরা। এ সময় তারা সড়ক সংস্কারের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
ঠিকদারি প্রতিষ্ঠানের সত্বাধিকারী সাজেদুর রহমান জানান, ড্রেন প্রকল্পে কাজে মাটি খোঁড়া চলছে। এতে একটু আধটু জনদুর্ভোগ হবে, কেননা রাস্তার ড্রেন হচ্ছে এটি। আগামি ছয় মাস চলবে ওই রোডের ড্রেন প্রকল্পের এ কাজটি। তবে দ্রুত মাটি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে করে জন চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়।
ওই প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত যশোর পৌরসভা প্রকৌশলী জুবায়ের হোসেন জানান, ৬ কোটি টাকার ড্রেন প্রকল্পের কাজ এটি। মাটি খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সাময়িক সমস্যা হচেছ মানুষের এটা সত্য। প্রকল্পটি আগামি নভেম্বর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। যাতে আরো দ্রুত সম্পন্ন করা যায় সে ব্যাপারেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেয়া হবে। আর তাৎক্ষনিকভাবে মাটি কাঁদা সরিয়ে নিতে পারলে জনদুর্ভোগ কমানো যাবে। সে ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের ফাহিম ফাত্তাহ জানান, এর আগে অনেক আশ্বাস পেয়েছি। সেসব আশ্বাস কার্যকর হয়নি। ছাত্রদের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশেও বারবার শাহ আব্দুল করিম সড়কটি সংস্কারের দাবিতে উদ্যোগ নেয়ার কথা বলেছি। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখিনি। এই রাস্তা সংস্কারের দাবি কলেজের ৩৮ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও এই এলাকার বাসিন্দাদের। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি। তারা যথার্থ উদ্যোগ দাবি করেন তিনি। তাদের দাবির মুখে যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলীর নেতৃত্বে পৌরসভার একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। এ সময় দ্রুত সড়ক সংস্কারের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি স্থগিত করেন।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোরাদ আলী জানান, এমএম কলেজের সামনের রাস্তা সংস্কারের জন্য সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। টেন্ডার আহ্বান করার কাজ শুরু হয়েছে। যে ঠিকাদার কাজটি পাবেন তাকে দ্রুত কাজ শুরু ও শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হবে।