এম. এ ফয়সাল, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন একটি সড়ক পাকাকরণ প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। রাস্তার নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নিয়ম না মেনে কাজ পরিচালনা, তাপমাত্রা পরিমাপ না করে কার্পেটিং, এবং রাতের আঁধারে ঢালাইসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ-তেঁতুলিয়া বাজার হয়ে শুকদেবপুর পর্যন্ত ২৮০০ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়ক পাকাকরণ প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৬.০২.৮৭০০.০০১.০৭.০৯৫.২৩৩৪৭৫ নং স্মারকে বাস্তবায়নের জন্য পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার এমএইচ কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মোঃ মোস্তাক হোসেন কার্যাদেশ পান। প্রাক্কলিত মূল্য ছিল ৩,০৫,৭৭,৭৬১ টাকা, কিন্তু ১০% কম দর দিয়ে কার্যাদেশ পেয়ে প্রকল্পটি হাতে নেন ২,৭৫,১৯,৯৮৪.৯০ টাকায়। নির্ধারিত সময় ছিল ২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল, তবে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্ধেক কাজও সম্পন্ন হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার দুই পাশে বরাদ্দকৃত মাটি না দিয়ে সংখ্যালঘুদের বাড়ির উঠান ও চলাচলের রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেয়া হয়েছে। বালু দেয়ার পর রোলিং না করেই কার্পেটিং শুরু হয়। ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের খোয়া ও ইট। এছাড়া, মিক্সিং এর ক্ষেত্রে গুণগত মান না রেখে ডুমুরিয়ার টিপনা এলাকা থেকে পিচ ও পাথর মিশিয়ে আনা হচ্ছে, যাতে সঠিক তাপমাত্রা বজায় থাকে না এবং মান যাচাই করা সম্ভব না হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কার্পেটিংয়ের তিনদিন পরই হাত দিয়ে রাস্তায় ব্যবহৃত পাথর উঠে যাচ্ছে। কলম বা আঙ্গুলের স্পর্শেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীরা এসব তুলে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সংরক্ষণ করে রেখেছেন।
শুকদেবপুরের কামরুল ইসলাম, মদনপুরের আমিনুর রহমান, ও ধলবাড়িয়ার আলাউদ্দিন বলেন, “এমন নিম্নমানের রাস্তার কাজ আমরা আগে কখনো দেখিনি। সবকিছুতেই চুরি – মাটি, বালু, ইট, পাথর কিছুই মানসম্মত নয়। রোলার ছাড়াই বালু দেয়া হয়েছে। গভীর রাতে কার্পেটিং করার দৃশ্য এটাই প্রথম দেখলাম।”
এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম. এম. আবুল কালাম আজাদ জানান, “জনগণের অভিযোগের ভিত্তিতে আমি সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বরাবরের মতো ঠিকাদারের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন এবং বলেন রাস্তায় কোনো অনিয়ম হয়নি, জনগণ দুষ্টুমি করে কার্পেটিং উঠিয়েছে।”
তালা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “কোনো অনিয়ম হয়নি, গুণগত মান ঠিক আছে। কিছু স্থানীয় ব্যক্তি জোর করে কার্পেটিং তুলে ফেলেছেন।”
তালা উপজেলা প্রকৌশলী রথীন্দ্র নাথ মন্ডল বলেন, “রাস্তা থেকে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার কথা শুনেছি। দূর থেকে মিক্সিং করে আনায় তাপমাত্রা ঠিক ছিল না বলেই এমনটি হতে পারে। বিষয়টি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলোচনা করেছি, যদি অনিয়ম হয় তাহলে পুনরায় কাজ করা হবে।”
জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, “আমি সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছি। অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুনরায় কাজ করানো হবে।”
স্থানীয়রা দ্রুত তদন্ত করে দুর্নীতির দায়ীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.