এমদাদ খান ,মাদারীপুর প্রতিনিধি
পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের কাওয়ালীপাড়া মৌজায় ৩১ বছর আগে বিক্রি হয়ে যাওয়া জমির কোটি টাকার ক্ষতিপূপূরণ ভুয়া দলিলপত্র ব্যবহার করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার শিকার হয়েছেন প্রকৃত জমির মালিক আবু কালাম খান, যিনি সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ও বঞ্চিত থেকে গেছেন।
জানা গেছে, বিআরএস খতিয়ান নম্বর ২৬৭ ও ২৬৮-এর অধীন চারটি দাগভুক্ত জমির প্রকৃত মালিক আবু কালাম খান, যিনি প্রায় ৩১ বছর আগে দলিলমূলে মজিদ ঢালীর কাছ থেকে জমিটি কিনেছিলেন। জমি বিক্রির পর মজিদ ঢালীর এই জমির সাথে দীর্ঘ দিন কোনো আর্থিক বা দখলসত্ত্ব ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি বেরিয়ে এসেছে যে, মজিদ ঢালীর ওয়ারিশগণ পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণকৃত সেই জমির বিপরীতে সরকারের দেওয়া মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ উত্তোলন করেছেন—ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে, পরিচয় গোপন রেখে এবং প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন: নুরজাহান বেগম, শাজাহান ঢালী, তারা মিয়া, আমির হোসেন, রাজা মিয়া, রাজিয়া বেগম, রাশিদা বেগম, মাকসুদা বেগম, হাসি বেগম, কমলা বেগম এবং সুজন মিয়া। অভিযোগ উঠেছে যে, তারা সমন্বিতভাবে একটি সংঘবদ্ধ জালিয়াত চক্রের মতো কাজ করেছেন।
এই চক্রের মূল হোতা হিসেবে সিরাজ ফকিরের নাম উঠে এসেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে বিপুল পরিমাণে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এই টাকা দিয়ে তিনি ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন বলেও জানা গেছে। এর আগেও অনিয়মের কারণে তিনি জেল খেটেছেন। স্থানীয়দের দাবি, সিরাজ ফকিরের চক্রের কাছে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন এবং তিনি প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। স্থানীয়রা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রকৃত মালিক আবু কালাম খান এই ঘটনায় বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেছেন। আবেদনপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, "এই জমির মালিক আমার পিতা। পৈত্রিক সূত্রে আমরাই এই জমির মালিক। অথচ আজ দেখি, আমার জমির পরিচয় ব্যবহার করে অপরাধীরা সরকারি অর্থ তুলে নিয়েছে। আমি বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ ফিরিয়ে চাই।"
জেলা প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে প্রশাসন আশ্বস্ত করেছে।
এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অনেকেই বলছেন, "এভাবে একদিকে প্রকৃত মালিক বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে জাতীয় প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা জালিয়াতদের পকেটে যাচ্ছে—এটা শুধু অন্যায় নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।"
এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত এবং প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মেহেদী হাসান
কার্যালয়ঃ দেশ ভিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মিয়া সড়ক, জিটি স্কুল সংলগ্ন, টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ।
মোবাইলঃ ০১৭১৮-৫৬৫১৫৬, ০১৯৯৫-৩৮৩২৫৫
ইমেইলঃ mehadi.news@gmail.com
Copyright © 2025 Nabadhara. All rights reserved.