ঝিনাইদহ সংবাদদাতা
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের ধরমপাড়া গ্রামে অবশেষে স্বস্তি ফিরেছে দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে। বছরের পর বছর অবহেলিত একটি কাঁচা রাস্তা অবশেষে নতুন করে নির্মিত হয়েছে স্থানীয় কয়েকজন জামায়াতপন্থী নেতার উদ্যোগে, তাও সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজস্ব অর্থায়নে।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে স্কুলে যাওয়া, রোগী বহন কিংবা কৃষিপণ্য পরিবহন চরম দুর্ভোগে পরিণত হয়েছিল।
এই প্রেক্ষাপটে গ্রামের সচেতন কিছু নাগরিক নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে প্রায় ৪০০ ফুট রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করেছেন। মাটি, বালি ও ইট ফেলে রাস্তা চলাচলের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। রাস্তাটি নির্মাণে ট্রাক ভাড়া, নির্মাণসামগ্রী সংগ্রহ, ও পরিশ্রম সবই এসেছে নিজস্ব তহবিল ও এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম থেকে।
স্থানীয় বাসিন্দা জুলকারনাইন জানান,
“অনেকবার সরকারি দপ্তরে ধর্না দিয়েও সাড়া মেলেনি। অবশেষে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিই কাজটা শুরু করার। এলাকাবাসীর সহায়তায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হয়েছে।”
এই রাস্তা সংস্কারের প্রভাব সরাসরি পড়েছে শিক্ষার্থীদের ওপরও। ধরমপাড়ার স্কুলপড়ুয়া ইকতিয়ার হোসেন বলেন,
“আগে স্কুলে যেতে জুতা খুলে হাঁটতে হতো। এখন অন্তত কাদা থেকে মুক্তি পেয়েছি।”
আরেক বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক বলেন,
“রাস্তা তো আমাদের সবার। কে করছে সেটা বড় কথা না, কাজটা হয়েছে—এইটাই বড়। আমরা কৃতজ্ঞ।”
এই উদ্যোগ শুধু একটি রাস্তা সংস্কারের গল্প নয়—এটি একটি সামাজিক প্রতিবাদও বটে। একদিকে স্থানীয় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা, অন্যদিকে রাজনৈতিক উদাসীনতার মাঝে সাধারণ মানুষের এ ধরনের উদ্যোগ একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়। যারা কাজটি করেছেন, তারা রাজনৈতিকভাবে জামায়াতঘেঁষা বলেই পরিচিত, কিন্তু তাদের এই সামাজিক উদ্যোগ স্থানীয় জনগণের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ যা-ই হোক, জনগণের সমস্যা সমাধানে এ ধরনের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে আরও এলাকাবাসীকে উদ্দীপিত করবে। এই ঘটনাটি প্রমাণ করে, প্রশাসনের বাইরে থেকেও জনগণ চাইলে নিজেরাই উন্নয়নের রূপকার হতে পারে।